বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বুধবার দলের নেতাকর্মীদের জনবিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ড পরিহার করে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনের ওপর জোর দিতে এবং নির্বাচনী বিজয়ে অতি-আত্মবিশ্বাসী না হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

tarique rahman 4তারেক রহমান

এক আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পক্ষেও মত দেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার দলের সকল স্তরের নেতা, কর্মী, সমর্থক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে, জনগণের সঙ্গে থাকতে এবং জনগণকে সঙ্গে রাখতে অনুরোধ করছি।’

তারেক রহমান বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণ যদি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে বিএনপি অবশ্যই জয়ী হবে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নেতা-কর্মীর বিজয়ের প্রতি আত্মবিশ্বাসী থাকা ভালো। কিন্তু সাবধান, অতি-আত্মবিশ্বাসী হয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না, এমন কোনো কাজ করবেন না যা জনগণ পছন্দ করে না। কারণ, যেকোনো পরিস্থিতিতে জনগণই আপনাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু, জনগণই বিএনপির সকল শক্তির উৎস।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মাফিয়া সরকারের প্রধান সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর এবং দেশকে আমদানি ও বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীল করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু পতিত স্বৈরাচারী সরকারের ১৫ বছরের অপশাসনের ফল এখনও জনগণ ভোগ করছে।’

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পলাতক স্বৈরাচারী শাসকের পরাজয়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।

তারেক রহমান বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রত্যাশা করে দেশের জনগণ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, উচ্ছেদ হওয়া হাসিনা সরকারের সহযোগীদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টা চালিয়েছে।

‘৫ আগস্টের পরাজিত শক্তি এখন আবারও বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে চিত্রিত করার ন্যক্কারজনক অপচেষ্টা করছে,’ বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন।

পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশপন্থী শক্তিগুলিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ মাত্র একদিনে শেষ হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, তিন মাস সময়কাল কোনো সরকারের সাফল্য বা ব্যর্থতা মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট নয়।

তবে, যারা প্রতিদিন বাজারে যান এবং ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেন, তাদের কাছে তিন মাস তিন বছরের মতো মনে হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

‘তাই, বাজার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, বিশেষ করে কৃষক, দিনমজুর, নিম্ন আয়ের মানুষ এবং নিম্ন-মধ্যবিত্তের কষ্ট লাঘব করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ বিএনপি নেতা বলেন।

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সরকার যদি পণ্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এর সকল সংস্কার প্রচেষ্টা জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

১৯৭৫ সালের এই দিনে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সিপাহী-জনতা ঢাকা সেনানিবাস থেকে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে, যা তার ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করে।

সরকারের সংস্কার উদ্যোগ সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, তার দল সংস্কারকে সমর্থন করে, তবে বিশ্বাস করে যে, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বইভিত্তিক রাষ্ট্রীয় সংস্কারের চেয়ে রাজনীতি, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক কর্মী ও সমর্থকদের সংস্কার অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।’

বিএনপি নেতা মন্তব্য করেন যে, গত ১৬ বছরে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে।

‘তাই, আমাদের বুঝতে হবে যে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে ফ্যাসিবাদের সমর্থক না হয় সেজন্য জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। অন্যথায়, দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন বা নিয়ম-কানুনের সংস্কার টেকসই হবে না,’ তিনি সতর্ক করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারেক রহমান বলেন, দেশে জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত বা বিচার বিভাগ যদি শক্তিশালী ও কার্যকর থাকে তাহলে ফ্যাসিবাদ কখনও জনগণের স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিতে পারবে না।

‘জনগণের আদালত মানে জনরোষ নয়, এর অর্থ হলো কোন ব্যক্তি বা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন বা ক্ষমতাচ্যুত করার চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের হাতে নিহিত,’ তিনি ব্যাখ্যা করেন।

একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তারেক রহমান বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, বিচার বিভাগ এবং জনগণের আদালতকে কার্যকর এবং শক্তিশালী করেই রাজনীতি ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ গুণগত সংস্কার নিশ্চিত করা যাবে।

‘জনগণের ভোটাধিকার যদি নিশ্চিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রকে কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ বা প্রচার করার অপ্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে না, কারণ জনগণ নিজেরাই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকা খুনি, লুটেরা, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ এবং মাফিয়াদের প্রত্যাখ্যান করবে,’ তিনি বলেন।

তারেক রহমান বলেন, যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচার রাষ্ট্রীয় আদালতে বা বিচার বিভাগের মাধ্যমে হওয়া উচিত। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, কোনো ব্যক্তি বা দলের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের সংস্কৃতি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বা জনগণের আদালতে প্রবর্তন করলে তা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কার হিসেবে বিবেচিত হবে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণ আন্দোলনের মাধ্যমে জাতি আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে। কিন্তু, ফ্যাসিস্ট শক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে আমাদের এখন সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গণতন্ত্র এবং জনপ্রতিনিধিদের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুত বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, ডা. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস এবং ডা. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.