হাছান মাহমুদ: দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই ৫ আগস্টের ঘটনা ঘটানো হয়েছে

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। জাতীয় চার নেতাকে সেভাবেই হত্যা করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের ঘটনাও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই ঘটানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

রোববার (৩ নভেম্বর) লন্ডনভিত্তিক ‘চ্যানেল এস’ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় তিন মাসের মাথায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কোনও নেতার প্রথম সাক্ষাৎকার এটি। সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের বর্তমান অবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ, কোটা সংস্কার আন্দোলন, আয়নাঘরসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

‘আওয়ামী লীগ: তটস্থ, হতাশ, কোণঠাসা?’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ‘অভিমত’ নামে সাক্ষাৎকারটি নেন বুলবুল হাসান। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, দেশের ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ তার দল প্রয়োজনে বিএনপির সঙ্গে একযোগে কাজ করতেও প্রস্তুত আছে।

বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি নেতাদের অনেক বক্তব্যের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, বিএনপি এখন যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলছে; অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে, সেটির সঙ্গে আমরাও একমত এবং প্রয়োজনে বিএনপির সঙ্গে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা কাজ করব। এ সময় তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, এক-এগারোর সরকারের সময় একযোগেই কিন্তু গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করেছিলাম এবং গণতন্ত্র ফিরে এসেছে।

বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলামের সাম্প্রতিক বক্তব্য ‘রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা?’-এর সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, যাদের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী আছে, কোটি কোটি সমর্থক আছে। তাই আওয়ামী লীগ কখনও ফুরিয়ে যায়নি, ফুরিয়ে যাবেও না। আওয়ামী লীগ দেশ ও দেশের মানুষের ভালো চায়। তাই তারা সচেতনভাবে এখন নিশ্চুপ আছে।

বিএনপি সাম্প্রতিক সময়ে সংসদ নির্বাচন, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা, রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে যে অবস্থান নিয়েছে- সেগুলোর বেশিরভাগের সঙ্গেই একমত পোষণ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করলেই তা নিষিদ্ধ হয়ে যায় না। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান।

রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে হাছান মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের কিছু ভুল ছিল। আমরা সেই ভুলগুলোকে স্বীকার করি এবং ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে। আজকে মানুষের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে যে হতাশা রয়েছে, আমি আশা করবো, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই হতাশা কেটে যাবে। দেশে আবার স্বস্তিদায়ক পরিবেশ ফিরে আসবে।

২০১৪ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। তবে আমরা যেহেতু দায়িত্বে ছিলাম, তাই তাদেরকে নির্বাচনে আনতে না পারা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা। বিভিন্ন ফোরামে তাদেরকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে কথা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, যে সংখ্যাটা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে কত? কেউ বলেন, এত শত। আবার কেউ বলেন, হাজার বা তারও বেশি। সরকারি হিসেবে দেড় হাজার নিহতের কথা বলা হলে হাছান মাহমুদ নিহতদের নাম প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ৪৩ জন পুলিশ নিহতের কথা বলা হলেও সাবেক এই মন্ত্রী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ার বরাত দিয়ে তিন হাজার ২২৪ জন পুলিশের নিহত হওয়ার কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছাত্রলীগ-পুলিশকে উসকে দেওয়া এবং দায় অস্বীকারের বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, পুলিশের কী আত্মরক্ষার অধিকার নেই। পুলিশ ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। পুলিশের গাড়ি ঘেরাও করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে, পুলিশের ওপর গুলি ছোড়া হয়েছে। তখন পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়েছে। এ সময় তিনি ৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন।

কোটা আন্দোলনকে এত দূর যেতে দেওয়া ভুল ছিল বলে ব্যক্তিগত মত দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, বিষয়টিকে পুরোপুরি আদালতের হাতে ছেড়ে না দিয়ে যদি অন্যভাবে সমাধান করা হতো, তাহলে ভালো হতো। এটাকে এতদূর যেতে দেওয়াটাই ভুল ছিল।

দলীয় নেতাকর্মীদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, আমি সবার উদ্দেশে বলতে চাই, এই আঁধার কেটে যাবে। সহসাই দেশে একটি সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। আমরা অতীতেও জনগণের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছেন। তিনি সবার সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন। তার মনোবল পুরোপুরি চাঙ্গা আছে। আমরা মনে করি, খুবই সহসাই এই আঁধার কেটে যাবে।