১০ সিটি কর্পোরেশনের অপসারিত কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবি

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বাদে দেশের বাকি দশটি সিটি কর্পোরেশনের অপসারিত কাউন্সিলররা তাদের পুনর্বহাল দাবি করেছেন। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের অধীনে কাজ করার সুযোগ চেয়েছেন।

ছবি - সংগৃহীত

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের হলরুমে বাংলাদেশ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর সমিতির আয়োজনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর পাশাপাশি অপসারিত কাউন্সিলররা পুনর্বহালের দাবিতে এক সমাবেশও করেন।

বক্তারা বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কাউন্সিলররা দিনরাত কাজ করে আসছেন। তারা সব ধরনের নাগরিক সেবা প্রদান করে আসছেন। সরকারের সকল সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ওএমএস, টিসিবি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, শিশু ভাতা, সকল ধরনের আর্থিক কার্যক্রম এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ার সকল ধরনের সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া সিডিসি, প্রেসক্লাব, ওয়ার্ড ভিশন, আশ্রয় ফাউন্ডেশন, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রমও তারা দেখভাল করেন।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিটি কর্পোরেশন কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর সমিতির প্রধান উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম খান।

প্রধান অতিথি বলেন, কাউন্সিলররা স্থানীয়ভাবে সেবা দিলেও তাদের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।

কাউন্সিলররাই স্থানীয় সরকারের একমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজস্ব পরিচয় স্থাপন করতে না পারায় কাউন্সিলররা অবহেলিত।

‘কাউন্সিলররা সচিব, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির চরিত্র সনদ ইস্যু করেন। এছাড়া জন্ম, মৃত্যুসহ সকল নিবন্ধন কাউন্সিলরের কাছ থেকে নিতে হয়। তাই কাউন্সিলরদের উচিত তাদের দায়িত্ব বোঝা। তারা যেন বুঝতে পারেন যে, সংসদ সদস্য তাদের বড় ভাই নন,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় বিভিন্ন সরকার কাউন্সিলরদের অবহেলা করে। দেশের স্থানীয় সরকার যত শক্তিশালী হবে, দেশ তত উন্নত হবে। তাই বিদেশিরা আসলে সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজই দেখতে যান।

কাউন্সিলরদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণকে বুঝতে হবে সংসদ সদস্য ও কাউন্সিলর এক নয়। তারা কোন সংসদ সদস্যের ছোট ভাই নন। এই বিষয়গুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।

‘আপনারা যদি জনগণকে এই পার্থক্য বুঝিয়ে দিতে পারেন, তাহলে তারা সংসদ সদস্যের কাছে যাবে না, আপনাদের কাছে আসবে। কাউন্সিলররা আরও কিছুটা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করলে হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবেন,’ যোগ করেন তিনি।

আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কাউন্সিলরদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারকে বুঝতে হবে তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা কি।

‘আপনারা যদি এটা করতে পারেন তাহলে সফল হবেন,’ বলেন তিনি।

এ সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) মহাসচিব খুরশিদ আলম, ইউনাইটেড ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক সরদার শামস আল-মামুন (চাষী মামুন), ডিইউজের কার্যনির্বাহী সদস্য এম মোশাররফ হোসেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়া এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর (সংরক্ষিত) ওয়ার্ডের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর মোসাম্মৎ আয়েশা আক্তার দিনা বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণ করে। এ সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

সিটি কর্পোরেশনগুলো হলো- ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর, গাজীপুর এবং ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন।

এ দিনই আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে তিন পাহাড়ি জেলা বাদে ৩২৩টি পৌরসভা ও ৬১টি জেলা পরিষদের সদস্যদের অপসারণ করা হয়।

এর আগে গত ১৯ আগস্ট দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশন ও ৩২৩টি পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করা হয়। একই দিনে দেশের ৬০টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে এই পদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।