আপনি পড়ছেন

বিশ্বসঙ্গীতের অসাধারণ প্রতিভা কুইন্সি জোন্স আর নেই। ৯১ বছর বয়সে রবিবার রাতে লস অ্যাঞ্জেলেসের বেল-এয়ারের নিজ বাসভবনে পরিবারের সদস্যদের বেষ্টিত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মাইকেল জ্যাকসনের ঐতিহাসিক ‘থ্রিলার’ অ্যালবাম প্রযোজনা থেকে শুরু করে পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের সুর রচনা এবং ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, রে চার্লসসহ শত শত শিল্পীর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি সঙ্গীত জগতে এক অমর কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন।

quincy jones with michael jacksonমাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে কুইন্সি জোন্স (ডানে)

পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ রাতে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমাদের পিতা ও ভাই কুইন্সি জোন্সের মৃত্যুর সংবাদ জানাতে হচ্ছে। এটি আমাদের পরিবারের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তবে তিনি যে অসাধারণ জীবন যাপন করেছেন তা স্মরণ করে আমরা তাকে উদযাপন করব। তার মতো আর কেউ হবে না।’

শিকাগোর দক্ষিণ পাড়ার এক গ্যাংয়ের সদস্য থেকে বিনোদন জগতের শীর্ষস্থানে পৌঁছানো কুইন্সির জীবনকাহিনী এক অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প। হলিউডে সফলতা অর্জনকারী প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ কর্মকর্তাদের একজন হিসেবে তিনি আমেরিকান সঙ্গীতের সোনালী অধ্যায় রচনা করেছেন। বহু বছর ধরে, কোনো সংগীতপ্রেমীর সংগ্রহে তার নামাঙ্কিত একটি রেকর্ড না থাকা অস্বাভাবিক ছিল। বিনোদন জগতের অভিজাত ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি, বিদেশি নেতা, চলচ্চিত্র তারকা, সঙ্গীতশিল্পী, সমাজসেবক, ব্যবসায়ী— সকলের সঙ্গেই তার ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

কাউন্ট বেসি ও লায়োনেল হ্যাম্পটনের সঙ্গে তিনি সফর করেছেন, সিনাত্রা ও এলা ফিটজেরাল্ডের রেকর্ডের বিন্যাস করেছেন, ‘রুটস’ এবং ‘ইন দ্য হিট অফ দ্য নাইট’-এর সুর রচনা করেছেন, রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের প্রথম শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন এবং আফ্রিকার দুর্ভিক্ষ দূরীকরণের জন্য ১৯৮৫ সালের চ্যারিটি রেকর্ড ‘উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর তত্ত্বাবধান করেছেন।

‘উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড’ গানটির সহ-রচয়িতা এবং শিল্পী লায়োনেল রিচি জোন্সকে ‘মাস্টার অর্কেস্ট্রেটর’ বলে অভিহিত করেছেন।

তার দীর্ঘ কর্মজীবনে, মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে ‘অফ দ্য ওয়াল’, ‘থ্রিলার’ এবং ‘ব্যাড’ অ্যালবামের প্রযোজনাকে সর্বোচ্চ সম্মানিত করা হয়। এই অ্যালবামগুলি তাদের স্টাইল এবং আবেদনে সর্বজনীন ছিল। শিশুশিল্পী থেকে ‘পপের রাজা’ হওয়ার পথে জ্যাকসনের অসাধারণ প্রতিভার বিকাশে জোন্সের বহুমুখী প্রতিভা এবং কল্পনাশক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ‘বিল্লি জিন’ এবং ‘ডোন্ট স্টপ টিল ইউ গেট এনাফ’-এর মতো ক্লাসিক ট্র্যাকগুলিতে, জোন্স এবং জ্যাকসন ডিস্কো, ফাঙ্ক, রক, পপ, আরএন্ডবি এবং জ্যাজ এবং আফ্রিকান সুরের মিশ্রণে বিশ্বব্যাপী এক সঙ্গীতধারা সৃষ্টি করেছেন।

‘থ্রিলার’ অ্যালবামটি শুধুমাত্র ১৯৮৩ সালেই দুই কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।

২০০১ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী ‘কিউ’-তে তার অর্জিত সম্মাননা ও পুরস্কারের তালিকা ১৮ পৃষ্ঠা জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে রয়েছে ২৮টি গ্র্যামি, দুটি সম্মানসূচক অস্কার এবং ‘রুটস’-এর জন্য একটি এমি। ফ্রান্সের লিজিওঁ দ'অনার, ইতালি প্রজাতন্ত্রের রুডল্ফ ভ্যালেন্টিনো পুরস্কার এবং আমেরিকান সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য কেনেডি সেন্টার সম্মাননাও তিনি পেয়েছেন। ১৯৯০ সালের তথ্যচিত্র "লিসেন আপ: দ্য লাইভস অফ কুইন্সি জোন্স" এবং ২০১৮ সালে তার কন্যা রশিদা জোন্স নির্মিত একটি চলচ্চিত্রে তার জীবনকাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।

১৯৩৩ সালে শিকাগোতে জন্মগ্রহণকারী জোন্স তার শৈশবকে সুখকর বলে মনে করেননি। তার মা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন, যা জোন্সের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি শিকাগোর রাস্তায় গ্যাংয়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন, চুরি এবং মারামারি করতেন। কিন্তু সঙ্গীতই তাঁকে উদ্ধার করে।

কিশোর বয়সে তিনি ট্রাম্পেট বাজাতে শেখেন এবং রে চার্লসের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। বার্কলি কলেজ অফ মিউজিকে তার প্রতিভা তাকে বৃত্তি এনে দিয়েছিল। তবে লায়োনেল হ্যাম্পটনের সঙ্গে সফরে যাওয়ার জন্য তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন। একজন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তিনি জাতিগত বাধা অতিক্রম করে মার্কারি রেকর্ডসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৭১ সালে তিনি একাডেমি পুরস্কার অনুষ্ঠানের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীত পরিচালক হন।

তিনি প্রায় সব ধরনের আমেরিকান সঙ্গীতের সঙ্গেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। জ্যাজ কিংবদন্তি (ডিজি গিলেসপি, ডিউক এলিংটন), র‍্যাপার (স্নুপ ডগ, এলএল কুল জে), পপ গায়ক (লেসলি গোর), আরএন্ডবি তারকা (চাকা খান, কুইন লতিফা)— সকলের সঙ্গেই তিনি কাজ করেছেন। ‘উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড’-এ মাইকেল জ্যাকসন, বব ডিলান, বিলি জোয়েল, স্টিভি ওয়ান্ডার এবং ব্রুস স্প্রিংস্টিনের মতো তারকারা অংশগ্রহণ করেছিলেন।

কুইন্সি জোন্স সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.