ফখরুল: ‘মাইনাস টু’ নিয়ে কেউ যেন না ভাবে, কেন নির্বাচন চান তাও জানালেন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সতর্ক করে বলেছেন, ‘মাইনাস টু’ নিয়ে আর কেউ যেন না ভাবে এবং বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা না করে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সাবেক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রবিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি বিএনপির আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, ২০০৭ সালের ‘এক-এগারো’র সময় রাজনীতিকে নিষ্ক্রিয় করে ‘মাইনাস টু’ সূত্র বাস্তবায়নের ব্যর্থ প্রয়াস চালানো হয়েছিল। কেউ যেন সেই পথে হাঁটার কথাও না ভাবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কিছু করার চেষ্টা করবেন না, কারণ বাংলাদেশের জনগণ তা কখনোই মেনে নেবে না।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিভিন্নভাবে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করেছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও কেউ তা করতে পারবে না।

কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করেছেন যে, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অস্থির। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা তার মতো একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এমন মন্তব্য আশা করি না।’

শনিবার সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছিলেন, ‘ব্যাংকে টাকা নেই। রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া বলে মনে হচ্ছে এবং আমরাও আমাদের কাজে ফিরে যেতে চাই।’

ফখরুল বলেন, রাজনীতিবিদরা কেবল ক্ষমতায় ফিরে আসতে চান না, তারা জীবন দিয়েছেন, নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করেছেন এবং শেখ হাসিনার কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

তিনি বলেন, তারা জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রুত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পক্ষে কারণ সরকার যত দেরি করবে, হাসিনা ও তার দোসরদের পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।

‘আমি আবারও বলতে চাই, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে আবর্জনা সরিয়ে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করুন। আপনাদের সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং আমরা আপনাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছি। এখন, আপনাদের আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত। আমরা ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য উদগ্রীব — এই বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না,’ বিএনপি নেতা বলেন।

একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির লক্ষ্য ক্ষমতায় ফিরে আসা, দলের নেতা-কর্মীরা দেশ পরিচালনা এবং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কীভাবে বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং জীবন দিয়েছেন তা বর্ণনা করে ফখরুল বলেন, বিএনপির এই বিশাল ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ বা দলের সমালোচনার কারণ হতে পারে এমন কোনো কাজে জড়িত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ যেন তা করতে না পারে। মনে রাখবেন।’

বিএনপি নেতা বলেন, স্বৈরাচার শাসক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ এখনও সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

‘আমরা এক ভয়ঙ্কর দানবের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছি, কিন্তু কোনো স্বস্তি নেই, কারণ জনগণের সরকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে মনে হচ্ছে,’ তিনি বলেন।

ফখরুল বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা সমর্থন দিয়েছেন, যারা নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার পরিচালনা করবে।

‘আমাদের ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) সবসময় তাকে শ্রদ্ধা করেছেন এবং আমরাও তাকে অত্যন্ত সম্মান করি। সারা বিশ্ব আপনাকে (ইউনূস) সম্মান করে। বিশ্বব্যাপী আপনার ব্যাপক সুনাম আছে এবং তা বজায় রাখা এখন আপনার প্রধান দায়িত্ব। আপনাকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কাজ দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ একটি নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আপনাকে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে,’ তিনি বলেন।

ফখরুল বলেন, ‘গত ১৫ বছরে জনগণের টাকা লুটপাট এবং বিদেশে পাচার করে আওয়ামী লীগ দেশ এবং অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের মনোবলের সবচেয়ে বড় ক্ষতি সাধিত হয়েছে, এবং এখন ব্যাংক থেকে শুরু করে অন্যান্য কার্যালয়ে সর্বত্র চোর বসে আছে।’

তিনি সাদেক হোসেন খোকার দেশের মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় উন্নয়ন এবং বিএনপিকে শক্তিশালী করার অবদানের কথা স্মরণ করেন।

মাথা থেকে পা পর্যন্ত, খোকা একজন সত্যিকারের বন্ধুবৎসল এবং কর্মীদের কাছে সহজ প্রকৃতির রাজনীতিবিদের প্রতিমূর্তি বলে ফখরুল উল্লেখ করেন।

বিএনপি নেতা বলেন, কোনো জাতীয় এবং রাজনৈতিক সঙ্কটের সময় খোকার মতো একজন কারিশম্যাটিক নেতার অভাব তারা অনুভব করেন।