দেশে বিরল এসএমএ আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় নতুন আশা

বাংলাদেশে বিরল রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফির (এসএমএ) চিকিৎসায় নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে। দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নিউরোমাসকুলার রোগ চিকিৎসা কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হওয়ায় এসএমএ আক্রান্ত শিশুদের বাবা-মায়েরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।

ছবি - সংগৃহীত

স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) একটি বিরল জিনগত রোগ যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম এবং স্বেচ্ছাকৃত পেশী নিয়ন্ত্রণকে (কঙ্কাল পেশী) প্রভাবিত করে। এটি মূলত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।

পেশী নিয়ন্ত্রণকারী অধিকাংশ স্নায়ুকোষ মেরুদণ্ডে অবস্থিত, যার কারণে রোগটির নামে ‘স্পাইনাল’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

এতদিন দেশে এই রোগের চিকিৎসার তেমন সুযোগ ছিল না। তবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি এবং ক্লিনিক চালুসহ বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে আক্রান্ত রোগী ও তাদের অভিভাবকরা এখন আশার আলো দেখছেন।

সম্প্রতি, দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নিউরোমাসকুলার রোগ চিকিৎসা কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়েছে, কারণ এই রোগের চিকিৎসার জন্য বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন। আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে ‘নিউরোমাসকুলার ডিজিজ ট্রিটমেন্ট সেন্টার’ নামে একটি বিশেষ এসএমএ ক্লিনিক চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রায় সকল চিকিৎসা সেবা একই ছাদের নিচে পাওয়া যাবে। এই ক্লিনিকের চিকিৎসকরা দেশে এই বিরল রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।

বিশিষ্ট স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি ওষুধ অনুমোদিত হয়েছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই একটি মুখে সেবনযোগ্য ওষুধ (রিস্ডিপ্ল্যাম) অনুমোদিত হয়েছে। সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষ ওষুধের মূল্য এবং আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমরা আশা করি ভবিষ্যতে ওষুধের দাম সবার নাগালের মধ্যে চলে আসবে।’

এসএমএ আক্রান্ত শিশুদের বাবা-মায়েদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘হতাশ হবেন না। এসএমএ থাকলেও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।’ তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এসএমএ বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধের মধ্যে একটি। এই রোগের একটি ভ্যাকসিনের দাম প্রায় ২২ কোটি টাকা। দেশে মুখে সেবনযোগ্য ওষুধ অনুমোদিত হয়েছে; এর দাম কমে ৩ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটি নিয়মিত সেবন করতে হয়, তাই সবার পক্ষে এটি কেনা সম্ভব নয়। তাই, এই বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এর জন্য দেশব্যাপী রোগীর সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে সকল পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা সেবা এবং স্বল্পতার কারণে ওষুধের প্রয়োজন অনেকটা কম অনুভূত হচ্ছে, এমন আশা করা যায়। তাই, সঠিক সেবা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। তিনি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

কিউর এসএমএ বাংলাদেশের সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এই বিরল এবং দুরারোগ্য ব্যাধির এখনও কোনও সম্পূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এই পরিস্থিতিতে, ‘কিউর এসএমএ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’-এর সদস্যরা এই এসএমএ ক্লিনিককে একটি সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করছেন।

সংগঠনটির পরিকল্পনা, এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার। সংগঠনটি ইতিমধ্যেই এসএমএ সচেতনতার ওপর সেমিনার, ভার্চুয়াল পরামর্শ সভা, র‍্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

এসএমএ বা স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি একটি দুরারোগ্য বিরল রোগ। এই বিরল জিনগত ব্যাধিটি পেশী নিয়ন্ত্রণকারী মোটর নিউরনের ক্ষতির কারণে ঘটে। রোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে এসএমএ টাইপ এক থেকে টাইপ চার পর্যন্ত বিভক্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসএমএ-এর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগে শুরুর দিকে চিকিৎসা করালে ভালো ফল পাওয়া যায়। নবজাতকের স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে শুরুর দিকে চিকিৎসা করা সম্ভব।

ওষুধের পাশাপাশি থেরাপিসহ সহায়ক চিকিৎসার মাধ্যমে আক্রান্ত শিশুকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়া সম্ভব। গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক তরল পরীক্ষা করেও গর্ভস্থ শিশু আক্রান্ত কিনা তা জানার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তাই, সচেতনতা এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।