মার্কিন ভোটারদের হাতে ঝুলছে ইউক্রেনের ভাগ্য!

৫ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে মার্কিন নাগরিকদের চেয়েও বেশি উদ্বিগ্ন ইউক্রেনবাসী। কারণ, আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ অনেকাংশেই এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে।

মার্কিন নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে ইউক্রেন

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আনুষ্ঠানিকভাবে হামলা চালাতে শুরু করে। শক্তি-সামর্থে রাশিয়ার চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও এ পর্যন্ত তারা যুদ্ধটা টেনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে। রাশিয়াকে হারিয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার বহু আধুনিক অস্ত্র তুলে দিয়েছে ইউক্রেনের হাতে। শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র নিজে যেমন ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে গেছে, তেমনি পশ্চিমা দেশগুলোকে চাপ দিয়েছে ইউক্রেনকে সহায়তা করতে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রধান মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শুরু থেকেই সামরিক সহায়তা, অর্থনৈতিক সাহায্যসহ নানাবিধ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বকেও ইউক্রেনের পাশে দাঁড় করাতে চাপ প্রয়োগ করেছে। রাশিয়ার ওপর হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার চেষ্টা চালিয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের এই নীতির সাথে ইউরোপের দেশগুলোও রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য বন্ধ করেছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যাপক সহায়তা সত্ত্বেও ইউক্রেন গত আড়াই বছরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি। কিছু অঞ্চল স্বল্প সময়ের জন্য পুনরুদ্ধার করলেও আবারও রাশিয়ার অধিকরণে চলে গেছে। হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনা মারা গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ দেশ ত্যাগ করেছে। রাশিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে।

এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইউক্রেনের ভাগ্যের নির্ণায়ক হতে যাচ্ছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পরিবর্তে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস জিতলে ইউক্রেন কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। তবে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে ইউক্রেনের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হতে পারে। কারণ ট্রাম্প ইউক্রেনকেই এই যুদ্ধের জন্য দায়ী করেছেন এবং রাশিয়ার কাছে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিতে পরামর্শ দিয়েছেন।

ট্রাম্প যদি জিতেও ইউক্রেনের জন্য সম্মানজনক কোনো সমাধান হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলেও ইউক্রেনের সহায়তা কাটছাঁট হতে পারে। এমনকি সেনা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন তিনি। সেই ক্ষেত্রে রাশিয়ার দখল থেকে ভূখণ্ড উদ্ধারের আশা ম্লান হয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে-ই প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, ইউক্রেনের ওপর এর গভীর প্রভাব পড়বে। কমলা হ্যারিস জিতলেও সহায়তা কমে আসতে পারে। ট্রাম্প জিতলে দ্রুত যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা থাকলেও সেটা ইউক্রেনের জন্য সম্মানজনক নাও হতে পারে।

অন্যদিকে, দীর্ঘ যুদ্ধে ক্লান্ত ইউক্রেনের জনগণ এখন শান্তি চায়। তারা যুদ্ধের অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি চায়, নিজ ভূমিতে ফিরে আসতে চায়। যুদ্ধ বিরতির জন্য যে কোনো পদক্ষেপকে তারা স্বাগত জানাবে। আর ট্রাম্পও যুদ্ধ বন্ধের কথাই বলছেন।