লজ্জার ম্যাচে তাইজুল-মুমিনুলের কীর্তি

ভারত সফরে গিয়ে ধবলধোলাই হয়েছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের সিরিজেও ভাগ্য পাল্টাল না। মিরপুরে প্রথম টেস্টে প্রোটিয়াদের কাছে সাত উইকেটে হেরেছে টাইগাররা। আজ চট্টগ্রামে তো লজ্জাজনকভাবে হেরে গেল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দুই দিন বাকি থাকতে আফ্রিকানদের কাছে ইনিংস ও ২৭৩ রানের ব্যবধানে হেরেছে স্বাগতিকরা।

বাংলাদেশের ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার ফাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার উল্লাস। ছবি: ফেসবুক

এই জয়ে বিরাট ইতিহাস গড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্ট সংস্করণে এটাই তাদের সেরা জয়। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ছয় উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেঞ্চুরি করেন টনি ডি জর্জি, ত্রিস্টান স্টাবস ও উইয়ান মুলডার। এক ইনিংসে তিনজনেরই প্রথমবার সেঞ্চুরি পাওয়ার ঘটনা টেস্ট ক্রিকেটে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার দেখল বিশ্ব।

দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামলে শুরুতেই ধসে পড়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ৩২ রানের মধ্যে চার উইকেট হারায় তারা। ফলোঅনের ঝুঁকি নিয়ে আজ তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে নাজমুলের দল। আশঙ্কাটাই সত্যি হয়েছে। অল্পতেই গুটিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। ১৫৯ রানে থেমে যায় টাইগারদের প্রথম ইনিংস।

অনুমিতভাবেই বাংলাদেশকে ফলোঅন করিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমেও হতশ্রী চেহারা টাইগারদের। এবার দেড় শ’ রানও তুলতে পারেনি তারা। নাজমুলরা দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১৪৩ রানে। বিশাল এই হারে টানা দুইটি টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। ম্যাচ সেরা হয়েছেন আফ্রিকান ওপেনার টনি। প্রথম ইনিংসে ১৭৭ রান করেন তিনি।

সিরিজ সেরার পুরস্কার উঠেছে কাগিসো রাবাদার হাতে। এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ডানহাতি পেসার। দ্বিতীয় ইনিংসে নাজমুলদের ধসিয়ে দেন অবশ্য কেশভ মহারাজ। চার উইকেট পান সেনুরান মুথুসামি। প্রোটিয়াদের তোপের মুখে দুই ইনিংসেই আসা-যাওয়ার মিছিলে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে টাইগাররা।

সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রায় একাই লড়াই করেছেন মুমিনুল হক সৌরভ। ১১২ বলে ৮২ রান করেন তিনি। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ১০ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩০ রান করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৪৮ রানে আট উইকেট হারানোর পর এই দুজনই দেড় শ’ পার করেন। বল হাতেও পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল।

মুমিনুল-তাইজুল নবম উইকেট জুটিতে করেন ১০৩ রান। তাতেই হলো দারুণ এক রেকর্ড। প্রায় দেড় শ’ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম ৫০ রানের মধ্যে আট উইকেট হারানোর পরও নবম কিংবা দশম উইকেটে ১০০ রান যোগ করেছে কোনো জুটি। বাংলাদেশের আগে এমন ঘটনা আর দেখেনি বিশ্ব। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য রানের খাতা খুলতে পারেননি মুমিনুল।

তাইজুল ফেরেন এক রানে। দলীয় সর্বোচ্চ ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন দশ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা হাসান মাহমুদ। ৯৮ রানে আট উইকেট হারানোর পর মহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে নিয়ে দলীয় শতক পার করেন হাসান। ২৯ রানে অঙ্কনের আউটে ভাঙে জুটি। অধিনায়ক নাজমুল ৩৬ রানে আউট হন। তাদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের খেসারত দিতে হলো বড় ব্যবধানে হেরে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৫৯/১০।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ৫৭৫/৬।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: (ফলোঅন) ১৪৩/১০।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ও ২৭৩ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: টনি ডি জর্জি (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
সিরিজ সেরা: কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
সিরিজ: দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০ ব্যবধানে জয়ী।