ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম নিষিদ্ধে আইন পাস করল ইসরায়েল

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে সোমবার (২৮ অক্টোবর) একটি বিল পাস করেছে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট। এর ফলে গাজাসহ অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে সংস্থাটির কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। খবর আনাদোলুর।

নেসেট ও ইউএনআরডব্লিউএ

ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, সোমবার (২৮ অক্টোবর) ইসরায়েলে পার্লামেন্ট নেসেটে ইউএনআরডব্লিউএর সঙ্গে সরকারি সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করার জন্য একটি বিল উত্থাপিত হয়। এতে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ৯২ জন এবং বিপক্ষে ১০ জন ভোট দেন। ৯০ দিনের মধ্যে আইনটি কার্যকর হবে।

বিলটি পাসের পর ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা এবং বিলের অন্যতম প্রস্তাবক ইউলি এডেলস্টেইন বলেন, হামাসের সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএর গভীর সংযোগ রয়েছে, যা ইসরায়েল কখনোই মেনে নেনে নিতে পারে না। আরেকজন ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বোজ বিসমুথ এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি অংশ ইউএনআরডব্লিউএকে যেভাবে দেখে, ইসরায়েলিরা তাদের সে দৃষ্টিতে দেখে না।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, ইউএনআরডব্লিউএ ইসরায়েলের সার্বভৌম ভূখণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে না, কোনো পরিষেবা প্রদান করবে না বা কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করবে না। পূর্ব জেরুজালেমেও ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম বন্ধ করা হবে এবং সংস্থার ক্ষমতা ইসরায়েলের দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণে হস্তান্তর করা হবে। সংস্থাটির সদস্যদের কূটনৈতিক পাসপোর্টও স্থগিত করা হবে।

ইউএনআরডব্লিউএ মুখপাত্র জুলিয়েট তৌমা এই পদক্ষেপকে ‘মর্মান্তিক‘ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রও নেসেটের এই পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে তারা গাজায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সংস্থাটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে।

১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর ইউএনআরডব্লিউএ দীর্ঘ সাত দশকের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের খাদ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মতো জরুরি সহায়তা দিয়ে আসছে। ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি এ সংস্থা গাজা এবং পশ্চিম তীরের কয়েকটি এলাকায় হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও সাহায্য প্রদান করে থাকে।

তবে ইসরায়েল দাবি করে, ত্রাণ কার্যক্রমের আড়ালে এটি হামাসকে নানা ধরনের সহায়তা করে। গত বছর ইসরায়েলে হামাসের হামলাতেও এ সংস্থার কিছু সদস্য অংশ নিয়েছিল বলে অভিযোগ করে আসছিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। ফলে গাজা হামলার সময় এ সংস্থাটির সদস্য ও স্থাপনা ইসরায়েলিদের নির্বিচার হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। ফলে গত এক বছরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় সংস্থাটির ২৩৩ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটির দুই-তৃতীয়াংশ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।