গাজায় মিশরের দুই দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব, বন্দী বিনিময়ের সম্ভাবনা

হামাসের হাতে বন্দী চার ইসরায়েলি নাগরিকের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিয়ে গাজায় দুই দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে মিশর। রবিবার মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এই ঘোষণা দেন।

বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধে কাতারে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, যেখানে সিআইএ এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধানরা অংশ নিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটেই সিসি কায়রোতে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাদজিদ তেব্বৌনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু করা উচিত।

এ বিষয়ে ইসরায়েল বা হামাসের তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আমি আশা করি হামাস নতুন প্রস্তাবগুলো শুনবে, তবে তারা এ ব্যাপারে দৃঢ় যে যেকোনো চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হতে হবে এবং ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।’

অন্যদিকে ইসরায়েল বলেছে, হামাসকে সামরিক শক্তি এবং গাজার শাসকগোষ্ঠী হিসেবে নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধের অবসান হবে না।

গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করে নেওয়ার পর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশর মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রমতে, গাজায় ইসরায়েলের বিমান ও স্থল হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪৩,০০০ ছাড়িয়েছে।

রবিবার আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দোহায় আলোচনার লক্ষ্য হলো স্বল্পমেয়াদী যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের হাতে বন্দী কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া। এর বিনিময়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেবে।

একাধিক মধ্যস্থতার চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত যে লক্ষ্য অর্জনে বাধা রয়েছে তা হলো এক মাসেরও কম সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে একমত হওয়া। এর মাধ্যমে আরও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আশা করা যাচ্ছে।

রবিবার গাজায় নিহত ৪৩ জনের মধ্যে অন্তত ৪৩ জনই ছিলেন উত্তর গাজার বাসিন্দা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের দুর্দশা ‘অসহনীয়’ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি সামান্যতম সম্মান না দেখিয়ে এই সংঘাত চলছে।

এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ‘মহাসচিব (আন্তোনিও গুতেরেস) উত্তরে মৃত্যু, আহত এবং ধ্বংসের মর্মান্তিক স্তর দেখে হতবাক।’

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় মানবিক ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে, যা মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

রবিবার জাবালিয়ায় এক বিমান হামলায় ২० জন নিহত হয়েছে। জাবালিয়া গাজার আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের মধ্যে বৃহত্তম। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উত্তর গাজার জাবালিয়া, বেইত হানুন এবং বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ লোক নিহত হয়েছে।