ডেঙ্গু: রাজধানীতে ৮৫ শতাংশেরও বেশি ‘ডেন-২’ সেরোটাইপে আক্রান্ত, মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে!

রাজধানীতে এবারের ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৮৫ শতাংশেরও বেশি ‘ডেন-২’ সেরোটাইপে আক্রান্ত। আইসিডিডিআরবি’র ডেঙ্গু স্ট্রেন নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্ত বাকি রোগীদের বেশিরভাগই ‘ডেন-৩’ সেরোটাইপে আক্রান্ত। খুবই সীমিত সংখ্যক রোগী ‘ডেন-১’ এ আক্রান্ত। চট্টগ্রামেও আক্রান্তদের ৯০ শতাংশ ‘ডেন-২’ সেরোটাইপে আক্রান্ত।

এডিস মশা, ফাইল ছবি

গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও মৃত্যুহার প্রায় একই। ২০২৩ সাল থেকে ব্যাপক আকারে ‘ডেন-২’ সেরোটাইপের প্রকোপ এই সংকটের মূল কারণ।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ডেন-২ সেরোটাইপ আরও দুই বছর ধরে থাকতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেন-২ এর প্রকোপ বেশি হওয়ায় দ্বিতীয়বার বা তৃতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি এবং মহিলাদের মৃত্যুহার বেশি। হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিস অথবা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্তদের ডেঙ্গু হলে মৃত্যুঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

আইসিডিডিআরবি’র সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের বিজ্ঞানী ডা. মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, একজন ব্যক্তি একবার এক ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সেই ধরনের ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে তার শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু অন্য ধরনের ডেঙ্গু হলে পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করে এবং মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।

‘ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের মধ্যে ‘ডেন-২’ এবং ‘ডেন-৩’ দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবল। ‘ডেন-১’ খুবই কম দেখা যায়। একটি নির্দিষ্ট ডেঙ্গু সেরোটাইপে একবার আক্রান্ত হলে সেই ধরনের ডেঙ্গুতে আর আক্রান্ত হয় না। কিন্তু পরে যদি অন্য সেরোটাইপে আক্রান্ত হয় তাহলে জটিলতা বেড়ে যেতে পারে,’ বলেন এই বিজ্ঞানী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত একটি ডেঙ্গু সেরোটাইপ তিন থেকে চার বছর স্থায়ী থাকে। গত বছরও ‘ডেন-২’ প্রকট ছিল। এবার যেহেতু ‘ডেন-২’ রয়েছে, পূর্ববর্তী সেরোটাইপের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় আক্রান্তের সংখ্যা কম হতে পারে।

বিভিন্ন হাসপাতালের তথ্যমতে, রোগীরা দুই ধরনের সমস্যা নিয়ে আসছেন। এক ‘শক সিন্ড্রোম’ এবং অন্যটি ‘হেমোরেজিক ফিভার’। গত বছর ‘শক সিন্ড্রোম’ রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। কারো ‘শক সিন্ড্রোম’ অথবা ‘হেমোরেজিক’ লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত অক্টোবরে মাত্র ২৬ দিনে ১০৮ জনের মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে। চলতি বছরের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে এই মাসে। গতকাল পর্যন্ত চলতি বছর মোট ৫৫ হাজার ৬৬৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২৭১ জনের। ২০০০ সালের পর এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ।

টিবিএস অবলম্বনে