জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার অঙ্গীকার আইজিপির

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম সাধারণ নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জনগণের পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন।

মো. ময়নুল ইসলাম

‘আমি আপনাদের (জনগণ) কাছে প্রতিশ্রুতি দিতে চাই, আপনারা যে ধরনের পুলিশ বাহিনী চান, আমরা সেই ধরনের পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে চাই,’ আজ রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাজিদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইজিপি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে নেতৃত্বের স্তরে হাতগোনা কিছু বিপথগামী পুলিশ কর্মকর্তার কারণে পুলিশ জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারেনি।

‘আমরা সবসময় জনগণকে আমাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করি এবং একটি আদর্শ পুলিশ বাহিনীর লক্ষ্যই হওয়া উচিত। পুলিশ জনগণের জন্য এবং পুলিশ জনগণের সঙ্গে … জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্যই পুলিশ,’ তিনি বলেন।

পুলিশ দেশের জন্য একটি অনন্য বাহিনী উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতির জন্য শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাই পুলিশের দর্শন।

‘কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, নেতৃত্বের স্তরে হাতগোনা বিপথগামী ও ছিন্নমূল কিছু পুলিশ কর্মকর্তার কারণে আমরা আমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারিনি,’ তিনি বলেন।

মুক্তিযুদ্ধে পুলিশই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় মৃত ব্যক্তিদের দাফনসহ পুলিশের মানবিক কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে।

‘বর্তমানে আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারছি না। তাই, আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষার পুলিশ গঠন করতে চাই,’ আইজিপি বলেন।

তিনি বলেন, পুলিশ তাদের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করবে।

‘আমি পুলিশকে বলতে চাই, আপনাদের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা ব্যবহার করতে পারবে না এবং রাজনীতিবিদদের বলতে চাই, দলীয় স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার করবেন না,’ তিনি বলেন।

ব্যাপকহারে কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, যোগ্য এবং বঞ্চিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঠিক স্থানে বসানো হয়েছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের অপকর্মের কারণে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

‘ছাত্রলীগ এখন একটি নিষিদ্ধ সংগঠন। তাই, তাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সভা-সমাবেশ করার অধিকার নেই। ছাত্রলীগ যদি মিছিল বের করার চেষ্টা করে, তাহলে অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠনের মতো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’ তিনি বলেন।

ছাত্রলীগের সকল অন্যায়-অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন আইজিপি।

শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলা এবং অন্যান্য ঘটনা সম্পর্কে আইজিপি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রদের ও জনগণের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলি ঠিকভাবে তদন্তের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।

‘শহীদ আবু সাঈদের মামলাটি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন পিবিআই কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। এ মামলায় এ পর্যন্ত দুই পুলিশ সদস্যসহ ২১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,’ তিনি বলেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আমিনুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. আজমল হোসেন, পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কমান্ড্যান্ট বাসুদেব বণিক, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা লে. কর্নেল মাসুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম, রংপুর সমন্বয়ক ডা. জামিল হোসেন, ইমরান আহমেদ, আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম ও ভাই আবু হোসেন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সমসুজ্জামান সামু, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান বেলাল প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।