চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশাল সমাবেশ, ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা

দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং উগ্রবাদের রাশ টানতে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হিন্দু নেতারা।

ছবি - ইউএনবি

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) চট্টগ্রামের লালদিঘীর ময়দানে এক বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রেখে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে আমাদের দেশ থেকে উৎখাত করে শান্তিতে বসবাস করবে, তাহলে এই দেশ আফগানিস্তান কিংবা সিরিয়ায় পরিণত হবে। কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি টিকে থাকবে না। বাংলাদেশ হয়ে উঠবে সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য।’

চিন্ময় বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র এবং পুন্ডরীকধামের অধ্যক্ষ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে হিন্দু মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগের ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবিতে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে এই মঞ্চ।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০০০-২০০০ এরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৬০০টিরও কম ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোন্দলের কোনো সম্পর্ক নেই। অধিকন্তু, পুলিশ জানিয়েছে, অক্টোবরে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৩৫টি ঘটনা ঘটেছে।

অধ্যক্ষ চিন্ময় বলেন, ‘আমাদের যত নির্যাতন করা হবে, আমরা ততই ঐক্যবদ্ধ হব। এই ঐক্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই বাঙালি সংস্কৃতির ঐক্য। এই ঐক্য কোনোভাবেই ভাঙা যাবে না।’

তিনি জানান, ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১৯ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি ঘোষণা করেন, প্রতিটি বিভাগে হিন্দু সম্প্রদায়ের গণসমাবেশ এবং প্রতিটি জেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করা হবে।

পুলিশ বাহিনীতে ৯৩ জন হিন্দুকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত ১৫,০০০ কোটি টাকার মধ্যে অমুসলিমদের বরাদ্দ কেন মাত্র ২০০ কোটি টাকা?

সংসদে আনুপাতিক হারে হিন্দুদের আসন ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘প্রয়োজনে আমরা ভোট বর্জন করব। গণতন্ত্রের নামে প্রহসন আমরা চাই না।’

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই হিন্দুরা নিরন্তর অবহেলিত। প্রতিটি সরকারই হিন্দুদের দুঃখ-কষ্ট, অন্যায়-অত্যাচার গোপন করার চেষ্টা করে।

তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হত্যা, নির্যাতন, ভূমি দখল, হয়রানি - কয়েক দশক ধরে সংখ্যালঘুরা কোনো বিচার পাচ্ছে না। দায়মুক্তির সংস্কৃতি এসব ঘটনা বারবার ঘটাতে অপরাধীদের উৎসাহিত করছে।

সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং তাৎক্ষনিকভাবে সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন, সংখ্যালঘু কল্যাণ ট্রাস্টগুলোকে ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, ভেস্টেড সম্পত্তি উদ্ধার, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনার ঘর বরাদ্দ, সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ডের আধুনিকীকরণ এবং দুর্গাপূজার জন্য পাঁচ দিনের ছুটি - তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে।

সমাবেশে তপনানন্দ গিরি মহারাজ, রবিশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, লীলারাজ গৌড় দাস ব্রহ্মচারী, মোহন্ত সচ্চিদানন্দ পুরী মহারাজ, মুরারী দাস বাবাজী, প্রাণজালালনন্দ পুরী মহারাজ, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক, এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।