ছাত্রলীগের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যা বললেন আবরার ফাহাদের বাবা-মা

অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করেছে। এই খবর প্রকাশের পর ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর সহিংসতায় নিহত শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ এবং মা রোকেয়া খাতুন বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কুষ্টিয়া শহরে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ন্যায়বিচারের জন্য তাদের লড়াইয়ের কাহিনী বর্ণনা করেছেন হতভাগ্য এই দম্পতি।

আবরার ফাহাদের বাবা-মা, ছবি - সংগৃহীত

পাঁচ বছর আগে তার ছেলের সঙ্গে কাটানো শেষ মুহূর্তগুলোর কথা স্মরণ করেন রোকেয়া খাতুন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সকালে আমি তাকে হাতমুখ ধুয়ে নামাজ পড়ে নাস্তা করার কথা বলেছিলাম। তিনি আবরারকে বাস স্টেশনে শেষ বিদায় জানিয়েছিলেন।  

আবরারের মা বলেন, 'গত রাতে খবরে দেখলাম, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বৈরাচারী শাসক যদি ছাত্রলীগকে সমর্থন না করতো, তাহলে তারা এতটা বিপজ্জনক হতো না। সেই রাতে তারা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। পুরো জাতি তা জানে।'    

আবরারের মৃত্যুর পাঁচ বছরে ন্যায়বিচারের জন্য তাদের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন রোকেয়া খাতুন। শোকাহত এই মা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, 'এ দেশের মানুষ আগে যেমন আমাদের পাশে ছিল, এখনও আমাদের সঙ্গে থাকবে। আবরারকে যারা হত্যা করেছে, তাদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি। আসামিরা এখনও পলাতক। যারা ছাত্রলীগকে হত্যায় উসকানি দিয়েছে, তাদেরও আইনের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছি।'    

তিনি বলেন, '৫ আগস্ট,২০২৪ এর আগে, আমার মতো হাজার হাজার মা তাদের সন্তানদের হারিয়েছে। সরকারকে প্রতিটি হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র একজন মা বোঝেন, সন্তান হারানোর বেদনা।'      

এদিকে আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, 'আমার ছেলে হত্যার বিচার কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। ছাত্রলীগ ছাড়াও আরও অনেকে আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদেরকে কিন্তু আসামি করা হয়নি।  সাধারণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে যারা অন্যায় ও নিপীড়ন করেছে, তাদের সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি দাবি জানাচ্ছি।'  

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে আবরার ফাহাদকে। তিনি বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।  

উল্লেখ্য, ২৩ অক্টোবর রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ১৮(১) ধারা অনুসারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।