বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রিজার্ভ

দেশজুড়ে তীব্র ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের পরিমাণ গত ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর কাছে মোট বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময় ছিল ৬১৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

মার্কিন ডলার

এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ ৪৮৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারে নেমে গিয়েছিল, যা ছিল তৎকালীন সময়ের সর্বনিম্ন।

এ বছরের আগস্টে এই পরিমাণ ছিল ৫২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং জুলাইয়ে ছিল ৬০৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

ব্যাংকারদের মতে, এই পতনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আন্তঃব্যাংক ডলার বাজারে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ডলার রিজার্ভ কমে যায়।

এছাড়াও, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে যাওয়া রোধ করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।

যদিও প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে রপ্তানি আয় প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছায়নি।

দেশজুড়ে অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগও এই সময়ের মধ্যে হ্রাস পেয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান।

ডলারের সংকটের কারণে আমদানি খাত চরম চাপের মধ্যে পড়েছে এবং বাংলাদেশি টাকার মানও ক্রমশ কমছে। বর্তমানে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১২০ টাকায় পৌঁছেছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রবাসী আয় বেড়ে ৬৫৪ কোটি ডলার হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৯০ কোটি ডলার।

একই সময়ে, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেড়ে ১১৩৭ কোটি ডলার হয়েছে, যা গত অর্থবছরে ছিল ১০৮২ কোটি ডলার।

গত তিন অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৩৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিক্রি করেছে, যার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব রিজার্ভ
কমে গেছে।

এই ডলার বিক্রির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে এবং ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্দেশিকা অনুযায়ী, গত ১৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯.৮ বিলিয়ন ডলারে।