নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে ইলিশ শিকার অব্যাহত!

সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর ৪২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবৈধভাবে ইলিশ শিকার অব্যাহত রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের জাতীয় এই মাছটির প্রজনন প্রক্রিয়া মারাত্মক হুমকির মুখে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একদল অসাধু জেলে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ধরা এবং দিন-দুপুরে নদীর তীরে তা প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। খবর ইউএনবি।

ইলিশ মাছ

গত ১৩ অক্টোবর থেকে জারি হওয়া সরকারি এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রজনন মৌসুমে ইলিশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার কথা।

সদর উপজেলার উরাকান্দা ও বরাট অন্তারমোড় এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আইন অমান্য করে জেলেরা কীভাবে নদীতে মাছ ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অন্তারমো দেখা গেছে, অসংখ্য মাছ ধরার নৌকা নদীতে ভাসছে এবং ৩-৫ জনের জেলে দল প্রতি বারে ১০-৩০ কেজি পর্যন্ত ইলিশ ধরে ফিরছে।

নদীর তীরে নারী-পুরুষের জটলা দেখা গেছে, যারা সরাসরি জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ কিনছে। ফলে অবৈধ এই বাণিজ্য কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে তা স্পষ্ট।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০-৪০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকায়। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের বড় মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায় এবং এক কেজির কাছাকাছি ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে ১,২০০ টাকা পর্যন্ত।

খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজিতে ১০০ গ্রাম ছাড় পেয়ে ৫০-১০০ টাকা লাভ রেখে আশেপাশের গ্রামে এসব ইলিশ বিক্রি করছে। এমনকি তারা ঘরে ঘরে ডেলিভারির সুবিধাও দিচ্ছে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও, অবৈধ এই কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। জেলেরা টাস্কফোর্সের তৎপরতা সম্পর্কে অবগত থাকে এবং কর্তৃপক্ষ চলে যাওয়ার পরই মাছ ধরতে নামে। ফলে তারা সহজেই ধরা পড়া থেকে রক্ষা পায়।

বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ

স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তারা জনবল ও আর্থিক সংস্থানের অভাবে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ক্ষেত্রে অসুবিধার কথা স্বীকার করেছেন।

সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তাফা আল রজিব জানান, তার দল প্রতিদিন তিনটি অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু জনবল ও সরঞ্জামের অভাবে তাদের কার্যক্রম সীমিত।

এছাড়াও, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর নির্ভর করতে হয়, যা অবৈধ কর্মকাণ্ড রোধে বাধা সৃষ্টি করে।

আল রজিব বলেন, ‘নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য আমাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা এবং পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। এগুলো পেলে আমরা জাটকা ধরা বন্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারব।’

দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমরান মাহমুদ তুহিন জানান, ইলিশ রক্ষায় পুলিশ মৎস্য বিভাগকে সহযোগিতা করছে।

চলমান ইলিশ শিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে মাছ ধরার মাত্রা সম্পর্কে অবগত নয়। কিন্তু তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, যাচাই-বাছাইয়ের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই অবৈধ ইলিশ শিকার কেবল মাছের সংখ্যা হ্রাসই করে না, পাশাপাশি সরকারের সংরক্ষণ প্রচেষ্টাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা এবং ইলিশ মৎস্য সম্পদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।