বিএনপি: হাসিনার হুট করে পালিয়ে যাওয়াই তার পদত্যাগ

বিএনপির সিনিয়র নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে যে আলোচনা চলছে তা ষড়যন্ত্রের নতুন মাত্রা। জনগণের ক্ষোভের মুখে দেশ ত্যাগ করাই প্রমাণ করে যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই নানান ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চলছে। এখন আবার শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি বলে বিভ্রান্তিকর ও উদ্বেগজনক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’

আজ সোমবার এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেছেন যে, তিনি হাসিনার পক্ষ থেকে কোন পদত্যাগপত্র পাননি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবও জানিয়েছেন যে, তার কাছেও এই নথি নেই।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এটি তাদের ষড়যন্ত্রের নতুন মাত্রা। শেখ হাসিনা অবশ্যই পদত্যাগ করেছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। ইউটিউবে আমরা শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্র দেখেছি। তাছাড়া, মাত্র ৪৫ মিনিটের নোটিশে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্রের প্রয়োজন নেই। এটাই তার পদত্যাগের প্রমাণ।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য জানান, শেখ হাসিনার আর কোনো পাসপোর্ট নেই, কারণ বাংলাদেশ সরকার তা বাতিল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘তিনি (হাসিনা) এমন এক প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছেন যারা তাকে অন্য দেশে পাঠাতে চায়। তবুও তার পদত্যাগপত্রের প্রয়োজন কি?’

হাফিজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, এক স্বার্থান্বেষী মহল জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এসব মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে যে, হাসিনা এখনও বৈধ প্রধানমন্ত্রী। এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর কী হতে পারে?’ প্রশ্ন করেন তিনি।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই বক্তব্য দেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি আরও দাবি করেন, খুনি শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক এবং আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হোক।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য নতুন সরকার গঠনের আশা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা আরও বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি, কারণ এখনও আমরা এই সরকারের উদ্দেশ্য, তারা কিভাবে সংস্কার বাস্তবায়ন করবে এবং তারা কতটুকু করতে পারবে তা সম্পর্কে অনিশ্চিত। এমনকি তারা তাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানেন কিনা তা নিয়েও আমরা বিভ্রান্ত।’

গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অসংখ্য মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান, খালেদা জিয়া এবং যারা বারবার জেলে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা কেন এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি তা আমরা বুঝতে পারছি না।’

বিএনপি নেতা দাবি করেন, সরকার যেন অবিলম্বে তারেক রহমান এবং আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র ও অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার করে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে এক ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি, যেখানে জাতীয় ঐক্য বিঘ্নিত করা এবং স্বাধীনতা ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য ভারতের সহায়তায় প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে। যাদের জনগণ বিতাড়িত করেছে তারাই এখন ভারত থেকে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের এই ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে হবে।’