মায়ের দাফন-কাফনে ছিলেন না এস আলম ও তার ৫ ভাই

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম তার মা চেমন আরা বেগমের জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। শুধু তিনিই নন, তার কোনো ভাই-ই মায়ের শেষ মুহূর্তে পাশে থাকতে পারেননি।

চেমন আরা বেগমের নামাজে জানাজা

গত রোববার (২০ অক্টোবর) ভোরে বার্ধক্যজনিত কারণে রাজধানী বনানীর বাসায় ইন্তেকাল করেন চেমন আরা বেগম (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। হেলিকপ্টারে করে তার মরদেহ চট্টগ্রামের পটিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। একই দিনে আছর নামাজের পর পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলেও দেখা মেলেনি তার সন্তানদের। পরে পটিয়া পৌরসভার এস আলম জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

৭ ছেলে ও ৫ মেয়ের জননী ছিলেন চেমন আরা বেগম। গত ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার বড় ছেলে মোরশেদুল আলম মৃত্যুবরণ করেন। বাকি জীবিত ছয় ছেলে - সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম, আবদুল্লাহ হাসান, ওসমান গনি, আবদুস সামাদ, রাশেদুল আলম ও শহিদুল আলম কেউই তার দাফন-কাফনে উপস্থিত হতে পারেননি। ভিডিও কলেই তারা শেষবারের মতো মাকে দেখেন। সাইফুল আলম মাসুদের দুই ছেলেকেও দাদীর শেষ সময়ে পাশে দেখা যায়নি।

পারিবারিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠার পেছনে চেমন আরা বেগমের অনেক বড় অবদান রয়েছে। এস আলম গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পূর্বে তিনি তার ভাই আকতারুজ্জামান বাবুর কাছে সাইফুল আলমকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত হয় সাইফুল আলমের এস আলম গ্রুপ এবং বেশ দ্রুতই উত্থান ঘটে গ্রুপটির।

গত কয়েক বছরে দেশের আর্থিক খাতে একটি আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছিল এস আলম গ্রুপ। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু নানা কৌশলে ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখলের পর থেকে তারা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। গণঅভ্যুত্থানে বিদায় নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশ্রয়ে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ ব্যাংকিং খাতে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এক ব্যক্তিতে পরিণত হন। ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগসাজশ ও সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিকে ব্যবহার করে ব্যাংক দখল, একাধিক ব্যাংকের লাইসেন্স নেওয়া, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণের আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর ফের আলোচনায় উঠে আসে এস আলম গ্রুপ। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রুপ চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তার বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের দায় মেটানো হবে। তবে তাদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল আলম মাসুদসহ তার অন্যান্য ভাইয়েরা বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।