গ্রেপ্তার-মামলার পর কর্মীদের পলায়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা

বিদ্যুৎ খাত অস্থিতিশীল করার অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের পর তারা চাকাচ্যুতি ও আইনি জটিলতার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ডের লোগো

গ্রেপ্তার ও মামলার কারণে পিবিএসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে থাকতে না পারায় গ্রাহক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ খাত অস্থিতিশীল করার অভিযোগে দুটি পৃথক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পিবিএসের ছয় কর্মচারীকে শুক্রবার তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।

রিমান্ডে যাওয়া কর্মকর্তারা হলেন- রাজন কুমার দাস (এজিএম, মুন্সীগঞ্জ), দীপক কুমার সিং (ডিজিএম, কুমিল্লা), আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া (ডিজিএম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), বেলাল হোসেন (ডিজিএম, সিরাজগঞ্জ), মো. রাহাত (ডিজিএম, মাগুরা) এবং মনির হোসেন (এজিএম, নেত্রকোনা)।

অন্যদিকে, কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তারকৃত ছয় কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এই ছয়জনের মধ্যে বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি এবং বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে অপর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করার পর তাদের প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

বিদ্যুৎ খাত অস্থিতিশীল করার অভিযোগে পিবিএসের ১০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার খিলক্ষেত থানায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পরিচালক (প্রশাসন) আরশাদ হোসেন বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- পিবিএস মুন্সীগঞ্জের এজিএম রাজন কুমার দাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমিতির ডিজিএম আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, কুমিল্লার ডিজিএম দীপক কুমার সিং, জ্যেষ্ঠ সাধারণ ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, নেত্রকোনার এজিএম মনির হোসেন, বরিশালের সাধারণ ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির, নোয়াখালী সমিতির তার ইন্সপেক্টর আবু সালাম জাবেদ, মাগুরার ডিজিএম রাহাত, ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর এজিএম আব্দুল হাকিম এবং ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর এজিএম মো. সালাহ উদ্দিন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। তারা পূর্ববর্তী সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী, আরইবি'র পরিচালক (প্রশাসন) মো. আরশাদ হোসেনকে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পরে, আরইবি'র (জনসংযোগ বিভাগ) পরিচালক মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নির্বাহী পরিচালক বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন।’

পিবিএসের নির্বাহী পরিচালক মো. আসফুদ্দৌলার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

হয়রানি, মামলার নিন্দা

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার এবং পরবর্তীতে তাদের কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানানো হয়েছে। শুক্রবার আন্দোলনের সমন্বয়ক এজিএম আব্দুল হাকিম এবং এজিএম সালাউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, কর্মসূচি বাতিলের পরও বৃহস্পতিবার রাতে আরও চারজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

অন্যদিকে, আরইবি কর্মকর্তাদের মিথ্যা তথ্যের কারণে পিবিএসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানির শিকার হন। এই গ্রেপ্তার ও মামলার কারণে পিবিএসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন আর কর্মস্থলে থাকতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।

এ পরিস্থিতিতে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কর্মীদের কর্মস্থলে রাখা প্রয়োজন। চলমান সংকট নিরসনে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে। অন্যথায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হলে এর দায়ভার পিবিএস গ্রহণ করবে না বলেও বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিবিএসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ৮০টি পিবিএস শাখা আরইবি'র অধীনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা প্রদান করে আসছে। পিবিএসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫,০০০। কিন্তু আরইবি'র অধীনে থাকা সত্ত্বেও আমাদের কিছু পদ অস্থায়ী এবং কিছু চুক্তিভিত্তিক। ফলে বেতন-ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধা কম। আর এ কারণেই আরইবি এবং পিবিএসের একীভূতকরণের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। চুক্তিভিত্তিক এবং অনিয়মিত কর্মীদের স্থলে স্থায়ী কর্মসংস্থান এবং একক কর্মসংস্থান বিধি প্রণয়নের দাবিও আমাদের। কিন্তু তৎকালীন সরকার একের পর এক বৈঠক করেও কোন সমস্যার সমাধান করেনি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার রবিবার আমাদের সাথে বসবেন।’

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার কোনো কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও আরইবি ২০ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে এবং ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

পিবিএসের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আরইবি'র এই ধরনের উস্কানিমূলক কার্যকলাপ বন্ধ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং চাকরিচ্যুতি আদেশ বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয়।

পরে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের অনুরোধে এবং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি পূরণে আলোচনার আশ্বাস এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির আশ্বাসে সেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।