বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চান টুখেল

ইংল্যান্ডের নতুন কোচ হিসেবে বুধবার আত্মপ্রকাশের পর টমাস টুখেল জানালেন, ১৯৬৬ সালের পর থেকে বড় কোনো ট্রফির জন্য ইংল্যান্ডের অপেক্ষার অবসান ঘটানোই হবে তার লক্ষ্য।

টমাস টুখেল

চেলসির সাবেক এই কোচ ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ১৮ মাসের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি।

গত মৌসুম শেষে বায়ার্ন মিউনিখ ছাড়ার পর থেকে বেকার ছিলেন ৫১ বছর বয়সী টুখেল। স্থায়ী কোচ হিসেবে গ্যারেথ সাউথগেটের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে স্যভেন গোরান এরিকসন ও ফ্যাবিও ক্যাপেলোর পর তিনি ইংল্যান্ডের তৃতীয় বিদেশি কোচ।

ওয়েম্বলিতে সংবাদ সম্মেলনে টুখেল বলেন, ‘আমি জানি ফেডারেশনের ট্রফি কেবিনে কিছু শূন্যতা আছে। অবশ্যই, আমি সেই শূন্যতা পূরণে সাহায্য করতে চাই।’

বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের মতো দলেরও দায়িত্ব পালন করা টুখেল ট্রফি জয়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোচ। ১৯৬৬ সালের পর থেকে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের ৫৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে টুখেলকেই যোগ্য মনে করছে ইংলিশ এফএ।

চেলসিকে ২০২১ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় এ পর্যন্ত টুখেলের ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ অর্জন।

তবে জুড বেলিংহ্যামের মতো প্রতিভাবান ফুটবলারদের নিয়ে সাজানো দলকে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করার দায়িত্ব একজন ইংরেজ কোচকে না দিয়ে টুখেলকে নিয়োগ দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে এফএ।

ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ডিফেন্ডার গ্যারি নেভিল বলেন, ‘ইংরেজ কোচদের সক্ষমতার ওপর আস্থা রাখতে না পেরে এফএর কিছু গুরুতর প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া উচিত।’

আট বছর ধরে ইংল্যান্ডকে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে শক্তিশালী করে তোলার পর চলতি বছরের জুলাই মাসে ইউরো কাপের ফাইনালে স্পেনের কাছে হেরে যাওয়ার পরই পদত্যাগ করেন সাউথগেট।

টুখেল বলেন, ‘গ্যারেথ এবং এফএ যা কিছু তৈরি করেছে, আমরা তার ওপর ভিত্তি করেই এগিয়ে যাব। আশা করি, আমরা আরও কিছুটা যোগ করতে পারব যা আমাদেরকে সাফল্য এনে দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মূল্যবোধ, নীতি এবং নিয়ম-কানুন বাস্তবায়নের চেষ্টা করব যাতে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়।’

বায়ার্নে টুখেলের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা অ্যান্থনি ব্যারি ইংল্যান্ডেও একই দায়িত্ব পালন করবেন।

'সেরা কোচ'

এফএ'র প্রধান নির্বাহী মার্ক বুলিংহাম জানান, সাক্ষাত্‍কারের জন্য ডাকা ১০ জনের মধ্যে ইংরেজ প্রার্থীরাও ছিলেন। তবে সাফল্য পাওয়ার জন্য টুখেলকেই সেরা বিকল্প মনে করেছে এফএ।

বুলিংহাম বলেন, ‘আমরা এই কাজের জন্য সেরা ব্যক্তিকে চেয়েছিলাম এবং আমরা মনে করি, আমাদের খেলোয়াড়দের এবং দেশের কাছে আমরা ঋণী। তাদের সেই সহায়তা, টুর্নামেন্টে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো একজনকে খুঁজে বের করা আমাদের দায়িত্ব ছিল যা তাদেরকে শেষ পর্যন্ত সাফল্য এনে দিতে সাহায্য করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুরুষ বিশ্বকাপে ট্রফি জেতার জন্য টমাস আমাদের সেরা সুযোগ এনে দেবে। তাই আমরা মনে করি, আমরা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি।’

পিএসজি এবং বায়ার্নের হয়ে লিগ শিরোপা জিতেছেন টুখেল। ডর্টমুন্ডের হয়ে জিতেছেন জার্মান কাপ। তবে সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে চেলসিতে থাকাকালীন।

চেলসির দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ব্লুজদের চ্যাম্পিয়নস লিগের গৌরব এনে দেন। এছাড়াও, লন্ডনের এই ক্লাবটির হয়ে তিনি উয়েফা সুপার কাপ এবং ক্লাব বিশ্বকাপও জিতেছেন।

তবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চেলসির নতুন মালিকপক্ষ তাকে বরখাস্ত করে।

মাত্র ছয় মাস পর তিনি বায়ার্নের কোচ হিসেবে যোগদান করেন এবং ক্লাবটিকে টানা ১১তম বুন্দেসলিগা শিরোপা এনে দেন।

যদিও গত মৌসুমে টুখেলের অধীনেই ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয় জার্মান জায়ান্টরা।

গত বছর টুখেলের হাত ধরেই বায়ার্নে যোগ দেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেন। টুখেলের অধীনে ৪৫ ম্যাচে ৪৪টি গোল করেছেন তিনি।

কেন বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি সত্যিই দুর্দান্ত একটি নিয়োগ। গত মৌসুমে আমি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি এবং আমি মনে করি, তিনি সত্যিই একজন শীর্ষস্থানীয় কোচ এবং একজন দুর্দান্ত মানুষ।’

টুখেল জানিয়েছেন, নতুন কাজ শুরু করতে পেরে তিনি খুশি।

তিনি বলেন, ‘আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিজেকে একটি প্রকল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং অন্য কোনো প্রতিযোগিতায় মনোযোগ না দেওয়া। জাতীয় লিগ দিয়ে শুরু করে বাছাইপর্ব এবং তারপর মূল পর্বে খেলতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম, পুরোপুরিভাবে রিচার্জ নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় পাই। জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে মার্চে প্রথম ক্যাম্প শুরু করতে চাই।’

সাউথগেটের পদত্যাগের পর গত আগস্টে লি কার্সলিকে ইংল্যান্ডের অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আগামী মাসে রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড এবং গ্রিসের বিপক্ষে জাতীয় লিগের ম্যাচগুলোতে তিনি দলের দায়িত্বে থাকবেন।

তবে এফএ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে গ্রিসের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে যাওয়ার ঘটনা তাদের সিদ্ধান্তের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। কারণ ম্যাচটির দু'দিন আগে ৮ অক্টোবর টুখেল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।