বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য জোটে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ!

চীনের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে (আরসিইপি) যোগদানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আমরা আরসিইপিতে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করে একটি চিঠি পাঠিয়েছি।’

আরসিইপির লোগো

আরসিইপি হলো বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় সেবা, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা এবং বিরোধ নিষ্পত্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত।

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতি সংস্থার (আসিয়ান) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে প্রদত্ত বাণিজ্য সুবিধা হারানোর আশঙ্কা থেকেই আরসিইপিতে যোগদানে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

আসিয়ানের ১০টি দেশ - ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম - বাংলাদেশের সম্ভাব্য রপ্তানি বাজার।

এছাড়াও, আরসিইপিতে আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এএফটিএ) স্বাক্ষরকারী আরও পাঁচটি দেশ রয়েছে: চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড।

আরসিইপির এই ১৫টি দেশ বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ শতাংশ, বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) ৩১ শতাংশ এবং বিশ্ব বাণিজ্যের এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ইতিমধ্যেই আরসিইপিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অনুমোদন করেছে।

আরসিইপি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২০ সালের নভেম্বরে চালু হয় এবং ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কার্যকর হয়। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে এটি অন্যান্য দেশকে যোগদানের সুযোগ করে দেয়।

যেকোনো উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ এবং এলডিসি সদস্য হিসেবে যোগদান করতে পারে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরসিইপিতে যোগদানের জন্য প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতে যোগদানের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি ৩.২৬ বিলিয়ন ডলার এবং এফডিআই ৩.৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

এই রপ্তানি আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসবে পোশাক খাত থেকে। এর ফলে পোশাক খাতে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে।

সার্বিকভাবে, আরসিইপি-তে যোগদান করলে দেশের জিডিপি ০.২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

তবে, প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা বৃদ্ধি না করতে পারলে সেবা, বিনিয়োগ এবং ই-কমার্স খাতে কার্যক্রম চালাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

যেহেতু বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত এবং আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামেরও সদস্য, তাই আরসিইপি সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করতে হবে। তবে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।

ফলে, বাংলাদেশ লাভবান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

আরেকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরের জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করতে আগামী মাসে ঢাকায় জাপানের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ ও জাপান ইপিএ নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করেছে।

তবে, আগস্ট মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে আনুষ্ঠানিক আলোচনা স্থগিত করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেছেন, ভারতের সঙ্গে একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

বাংলাদেশ ও ভারত দুই বছরেরও বেশি সময় আগে সেপা নিয়ে একটি যৌথ সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। উভয় পক্ষই এখন আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি আরও জানান, চীনের সঙ্গে প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা খুব শীঘ্রই শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

ডেইলি স্টার থেকে অনূদিত