মার্কিন আশঙ্কা: ইরানের সামরিক ও জ্বালানি স্থাপনায় আক্রমণ চালাতে পারে ইসরায়েল

এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসে ইরানের আক্রমণের জবাবে ইসরায়েল সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে সামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোকে বেছে নিয়েছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন।

ইরানের পতাকা

গত এক বছর ধরে ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং গাজায় হামাসের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। ফলে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরান হুমকি দিয়েছে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র আক্রান্ত হলে ইসরায়েলকে এর কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।

গত ১ অক্টোবর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েল পাল্টা পদক্ষেপ নেবে বলে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে। গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান এবং হামাস ও হিজবুল্লাহর একাধিক নেতাকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবেই ইরান এই হামলা চালিয়েছিল।

এনবিসির প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েল পরমাণু স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করবে বা হত্যাকাণ্ড চালাবে বলে কোনো ইঙ্গিত নেই। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কখন এবং কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয়ে ইসরায়েল এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।

মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলমান ইয়ম কিপ্পুর ছুটির সময় ইসরায়েল পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে।

এ বিষয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এখনও কোনো মন্তব্য করেননি।

এক বছর আগে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করলে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাত শুরু হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ধ্বংস করতে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

“গত এক দিনে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী লেবাননের অভ্যন্তরে এবং দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রায় ২০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসী ঘাঁটি, লঞ্চার, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো।”

ইসরায়েল আরও জানিয়েছে, লেবানন থেকে আসা পাঁচটি রকেট হামলা আকাশে থেকেই বিধ্বস্ত করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে দুটি পৃথক ঘটনায় একজন রিজার্ভ সেনা সদস্য এবং একজন কর্মকর্তা গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও, আরও কয়েকজন সেনা সদস্য সামান্য থেকে মাঝারি আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে একটি সুড়ঙ্গ আবিষ্কারের পর একজন হিজবুল্লাহ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। সুড়ঙ্গটি একটি গোপন ঘাঁটিতে যায় যেখানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।

হিজবুল্লাহ রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দক্ষিণ হাইফার তিরাত হা কারমেল পরিবহন ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালানো হয়েছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবস্থানে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবানন, বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠ এবং বেক্কা উপত্যকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ফলে হিজবুল্লাহর অনেক শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল সীমান্ত পেরিয়ে স্থল সৈন্যও পাঠিয়েছে।

অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রকেট হামলা চালিয়েছে।

লেবাননের সরকার জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানের কারণে ১২ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে ২,১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ১০,০০০ জন আহত হয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন শনিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যাল্যান্টের সঙ্গে এক ফোনালাপে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবস্থানে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি চালানোর খবরে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। তিনি ইসরায়েলকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী এবং লেবানিজ সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে তিনটি পৃথক ঘটনায় পাঁচজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।

হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী এবং ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠীর মতো তেহরানের সকল মিত্র মিলিশিয়াদের এই সংঘাতে যুক্ত হওয়ায় তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে।

ইরাকের ইসলামিক প্রতিরোধ রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি জনগণ ও লেবাননের প্রতি সমর্থন জানাতে ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলের জনবসতিতে একটি হামলার মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। এই হামলায় ১,২০০ জন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।

গাজায় হামাসকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে ৪২,০০০ থেকেও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।