ফরহাদ মজহার: মাহফুজ হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে হাজির হয়নি

বিশিষ্ট কবি ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের নেপথ্যে যাকে মূল কারিগর বলে মনে করা হচ্ছে, সেই মাহফুজ আলম কোন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি নন, বরং তিনি গভীর সামাজিক অস্থিরতার ফসল।

ফরহাদ মজহার ও মাহফুজ আলম

গত শনিবার এক ফেসবুক পোস্টে ফরহাদ মজহার লেখেন, ‘যারা মনে করেন মাহফুজ আলম একা, তারা ভুল করছেন।’

তিনি আরও লেখেন, ‘যারা তার পাশে আছি, আমরা তার পাশেই থাকবো। মাহফুজ হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে হাজির হয়নি। সমাজের অস্থিরতা থেকেই যুবসমাজের এই উত্থান। তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। সমাজকে বুঝতে পারলেই মাহফুজকে বুঝতে পারবেন। একজন মাহফুজ, একজন আখতার, নাহিদ, আসিফ, নুসরাত, আকরাম, আরিফ, জাহিদ, তুষার, উমামা, হাসনাত, সারজিস, নাজিফা, আবু বকর, তারিকুল, সানজানা তৈরি হতে একটা সমাজের কয়েক দশক লেগে যায়।’

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

২৫ আগস্ট নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে বিল ক্লিনটনের সঙ্গে কথা বলার সময় ইউনূস মাহফুজ আলমকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তবে মাহফুজকে মূল কারিগর হিসেবে চিহ্নিত করলে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের অবদান কি ক্ষুন্ন হচ্ছে, নাকি এটি রাজনৈতিকভাবে একজন ব্যক্তিকে নায়ক বানানোর আরেকটি প্রচেষ্টা, তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

এর জবাবে মাহফুজ ১৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে লেখেন, তাকে যদিও আন্দোলনের মূল কারিগর হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, তিনি নিজেকে সেভাবে দেখেন না।

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের বাসিন্দা মাহফুজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

ক্যাম্পাসে তিনি ছাত্র সংগঠন, গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত, যে সংগঠনটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল।

২৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার তাকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেয়।

ফরহাদ মজহার তার পোস্টে ছাত্রনেতাদের হেয় করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, ‘যারা বর্তমান নিয়ে কথা বলি, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই বলি, তারা বুঝি এই যে যুবসমাজ একটা মানসিক উল্লম্ফন দিয়েছে। বাংলাদেশ আর পেছনে ফিরে তাকাবে না। এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন। আমাদের কাজ হচ্ছে, তাদের পাশে থাকা, তাদের ভুলভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দেওয়া, আর তাদেরকে আরও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করা। কেউই তো আর ফেরেশতা নই।'

তিনি আরও বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাদেরকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। ভূ-রাজনীতি ও নব্য উদারপন্থী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কারণে এটা সহজ হবে না। কিন্তু বাংলাদেশ প্রস্তুত। আরও কঠিন লড়াই বাকি আছে।’