ভারতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে সাবেক মন্ত্রী নিহত

ভারতের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা ও মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিক (৬৬) দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। শনিবার (১২ অক্টোবর) মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে।

বাবা সিদ্দিক

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শনিবার রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা পূর্ব এলাকার নির্মল নগরে কোলগেট মাঠের কাছে অবস্থিত ছেলে স্থানীয় বিধায়ক জিশান সিদ্দিকের অফিস থেকে বের হন বাবা সিদ্দিক। তিনি যখন গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে লক্ষ্য করে তিনটি গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে স্থানীয় লীলাবতী হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছুক্ষণ পর সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

বাবা সিদ্দিক মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা পশ্চিম নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের অধীনে ২০০৪-০৮ মেয়াদে তিনি খাদ্য ও বেসামরিক সেবা সরবরাহ এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি ভারতের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসে ছিলেন। প্রায় পাঁচ দশক যুক্ত থাকার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এনসিপিতে যোগ দেন।

স্থানীয় পুলিশ জানায়, বাবা সিদ্দিককে গুলি করার ঘটনায় অভিযুক্ত দুই বন্দুকধারীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আটকদের একজন উত্তর প্রদেশ এবং দ্বিতীয়জন হরিয়ানা রাজ্যের বাসিন্দা। তাদের সঙ্গে থাকা তৃতীয় ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন।

এদিকে বাবা সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডে দল-মত নির্বিশেষে ভারতের প্রায় সব দলের রাজনীতিবিদরা শোক প্রকাশ করেছেন। মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী ও এনসিপির প্রধান অজিত পাওয়ার এ হত্যাকাণ্ডকে দুর্ভাগ্যজনক ও নিন্দনীয় উল্লেখ করে বলেছেন, তার মৃত্যুতে আমি হতবাক। আমি একজন ভালো বন্ধু ও সহকর্মীকে হারিয়েছি। আমরা এমন একজন নেতাকে হারিয়েছি, যিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে তিনি ছিলেন আপসহীন।

এনসিপির কার্যনির্বাহী সভাপতি ও বাবা সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রফুল প্যাটেল বলেন, এই ঘটনায় আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

এনসিপির (এসপি) নেতা শারদ পাওয়ার এ ঘটনায় মহারাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করে বলেছেন, মহারাষ্ট্রে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে তা উদ্বেগজনক।

মহারাষ্ট্রের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও এনসিপি (এসপি) নেতা অনিল দেশমুখ এবং রাজ্যটির বর্তমান বিধানসভার কংগ্রেসের বিরোধী দলীয় নেতা বিজয় ওয়াডেত্তিওয়ার বাবা সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমতাসীন একনাথ শিন্ডে সরকারের নিন্দা করেছেন। তারা বলেন, ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাওয়া একজন নেতাকে এভাবে গুলি করে হত্যা করাটা ভয়ংকর একটি ব্যাপার।

এদিকে ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেন, আমি পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছি। মুম্বাইয়ে গ্যাং-ওয়ারের মতো পরিস্থিতির পুনরুত্থান হতে দেওয়া উচিত নয়।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বাবা সিদ্দিক শুধু রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত ছিলেন না। বলিউডের সঙ্গেও তার যোগাযোগ বেশ ঘনিষ্ঠ। বিভিন্ন সময়ে তার জমকালো পার্টিতে বলিউডের অনেক তারকাকে দেখা গেছে। ২০১৩ সালে তার পার্টিতেই মান-অভিমানের পালা শেষ হয় বলিউডের দুই সেরা অভিনেতা শাহরুখ খান ও সালমান খানের। তাদের দুইজনকে দু’পাশে নিয়ে তোলা তার ছবিটি সবার কাছেই স্মরণীয় হয়ে আছে।