টিআইবি: ১৪ বছরে সড়ক ও সেতুতে ২৯ থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকা লুট
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
আওয়ামী লীগের ১৪ বছরের শাসনামলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ লুট হয়েছে বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, এতে লুটের পরিমাণ ২৯ হাজার থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনের ছবি
বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, আমলা ও ঠিকাদারসহ প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে এসব দুর্নীতি হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনস্বার্থ জড়িত প্রকল্পে রাজনীতিবিদ, আমলা ও ঠিকাদারদের মধ্যে ত্রিমুখী আঁতাত রয়েছে। তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এই দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, সড়ক ও মহাসড়ক খাতে ঘুষের মাধ্যমে ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ আত্মসাৎ হয়। এই ত্রিমুখী ‘সিন্ডিকেট’ ভাঙতে না পারলে দুর্নীতি দমনে কোনো পদক্ষপই সফল হবে না।
টিআইবির পক্ষ থেকে ৭৩ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যাদের মধ্যে রয়েছেন ঠিকাদার, সওজ’র কর্মকর্তা এবং প্রকৌশলী। ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করে প্রতিটি প্রকল্পে ঘুষ, দুর্নীতি এবং অনিয়মের মাধ্যমে কত শতাংশ অর্থ লোপাট হয়েছে তা হিসাব করতে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ করা প্রকল্পগুলো ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে সম্পন্ন হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সড়ক ও সেতু খাতে মোট সরকারি বরাদ্দ ছিল ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ব্যয়ের ৭২ শতাংশই চলে গেছে মাত্র ১৫ জন ঠিকাদারের কাছে।
স্তরভেদে দুর্নীতির হার
প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের কাছ থেকে লাইসেন্স ভাড়া, অন্যান্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে কার্যাদেশ ক্রয়, নিয়মের বাইরে উপ-ঠিকাদার নিয়োগ, প্রতিযোগী ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত, এবং স্থানীয় রাজনৈতিক চাঁদাবাজির কারণে মোট কার্যাদেশের মূল্যের ২ থেকে ৬ শতাংশ দুর্নীতি হয়।
কার্যাদেশ এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে ঘুষের মাধ্যমে বরাদ্দের ১১ থেকে ১৪ শতাংশ আত্মসাৎ করা হয়।
নির্মাণ প্রকল্পে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে ত্রিমুখী আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতির হার ১০ থেকে ২০ শতাংশ।
টিআইবি বলছে, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ঠিকাদার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী, বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ফলে ঠিকাদাররা নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় উপকরণের পরিমাণ কমিয়ে দেন। এসব অনিয়মে সহায়তা করেন প্রকল্প পরিচালক এবং প্রকৌশলীরা।
গাছ না লাগিয়ে টাকা আত্মসাৎ!
টিআইবি এমন দুর্নীতির উদাহরণও তুলে ধরেছে, যেখানে গাছ লাগানোর জন্য ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও একটি গাছও লাগানো হয়নি।
ঠিকাদারদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা
টিআইবি বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা এবং ঠিকাদাররা প্রায়শই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকেন, যার ফলে নিম্নমানের কাজ বা ধীরগতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার অভাব দেখা যায়। কিছু ঠিকাদার নিষিদ্ধ হলেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নজির নেই।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব এবং উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের কারণে কিছু ঠিকাদারকে কোনোরকম প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয় না। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জালিয়াতির অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হলেও তাদের মধ্যে ২৬টি প্রতিষ্ঠানই হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে।
কিছু ক্ষেত্রে খুবই নিম্নমানের প্রকল্প প্রস্তাবনা এবং সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্তাবনা তৈরির প্রমাণও পাওয়া গেছে।
সওজ’র কিছু কর্মকর্তা প্রকল্প প্রস্তাবনা দ্রুত অনুমোদন এবং গোপন মূল্যায়ন তথ্য সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে দুই লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
টিআইবি জানিয়েছে, দুর্নীতির সুযোগ তৈরির জন্য মোট আনুমানিক বাজেটের তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়।
ইফতেখারুজ্জামান হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য চাইলে টিআইবি প্রায়শই প্রয়োজনীয় তথ্য পায় না। তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর জোর দেন।
তিনি আরও বলেন, গবেষণা প্রতিবেদনে শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ তহবিলের প্রকল্পগুলো বিবেচনা করা হয়েছে। তবে বিদেশি অর্থায়িত প্রকল্পগুলোতেও দুর্নীতি হয়, যেখানে দেশি এবং বিদেশি আমলাতন্ত্রের মধ্যে আঁতাত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র উপদেষ্টা পরিচালক সুমাইয়া খায়ের। টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.