নিউ ইয়র্কে ডিবি হারুন!

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ঢাকায় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন হারুন, যিনি ‘ডিবি হারুন’ নামেই অধিক পরিচিত। সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, সরকারের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি অধঃস্তন পুলিশ সদস্যদেরকে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে ঠেকানোর নির্দেশ দিচ্ছিলেন।

গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবি

পুলিশ সদস্যরা অবস্থা বিবেচনায় তার নির্দেশ পালনে অপারগতা প্রকাশ করলেও নিরাপদ স্থানে থেকে তিনি তাদেরকে বারবার একই নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।

৬ আগস্টের ছাত্র-জনতার ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। যে কোনো মূল্যে এই লংমার্চ ঠেকাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

৫ আগস্ট সকাল থেকেই ডিআইজি হারুনকে আত্মবিশ্বাসী দেখা যাচ্ছিল। তিনি বিভিন্ন স্তরের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন এবং তাদেরকে সেদিনই ছাত্র-আন্দোলনের শেষ দিন হবে বলে আশ্বস্ত করছিলেন।

সিসিটিভিতে তিনি যখন ঢাকার উত্তর পয়েন্টে ব্যারিকেড ভেঙে জনস্রোতকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের দিকে এগিয়ে আসতে দেখেন, তখন উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারকে বারবার গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।

ছাত্র-জনতা যখন বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি পুলিশ সদস্যদেরকে তাদের উপর গুলি চালানোর জন্য নির্দেশ দিতে থাকেন।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো দেশের মানুষ যেন রাজপথে নেমে আসে। লোকজন ডিএমপির সেন্ট্রাল কমান্ড ও কন্ট্রোল ইউনিট ভবনের উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে।

এ অবস্থায় প্রাণভয়ে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের ইউনিফর্ম খুলে সাধারণ পোশাক পরে নিরাপদ স্থানে সরে যান। ডিবি হারুনও একইভাবে পালিয়ে যান।

পরবর্তীতে তিনি আইজিপির সঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরে যান। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দেয়াল টপকে সেখান থেকে পালিয়ে যান। রাতে তিনি ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় একটি দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে শোনা যায়।

পরের দিন তিনি পুলিশের সোয়াটের একটি ইউনিটের সহায়তায় মিরপুর যান। সেখান থেকে তিনি বিমানবন্দরে এসে বিদেশে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে সেখানে জনতা তাকে চিনতে পেরে মারধর করে বলে জানা যায়।

বলা হচ্ছে, গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

মঙ্গলবার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যার ক্যাপশনে বলা হয়, তিনি এখন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন। হারুনের স্ত্রী ২০০৬ সালে ডিভি লটারি পেয়ে আমেরিকার নাগরিকত্ব পান। সে সূত্রে তারা নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করতেন। গণঅভ্যুত্থানের পর হারুন অর রশিদ সে সুযোগ ব্যবহার করে নিউইয়র্ক স্টেটের লং আইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড