ভারতে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা পেল বাংলা

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাংলা ভাষাসহ আরও চারটি ভাষাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা দিলো ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা মারাঠি, বাংলা, পালি, প্রাকৃত এবং অসমীয়া - এই পাঁচটি ভাষাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলা অক্ষর

এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের ‘ধ্রুপদী ভাষা’র তালিকা এখন এগারোটিতে দাঁড়ালো। এর আগে তামিল (২০০৪ সালে), সংস্কৃত, কন্নড় ও তেলেগু, মালয়ালম এবং ওড়িয়া (২০১৪ সালে) - এই ছয়টি ভাষা ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেয়েছিল।

মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে মারাঠি ভাষাকে ধ্রুপদী মর্যাদা দেওয়ার দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই খুশির জোয়ার বইছে রাজ্যটিতে। ২০১৪ সালেই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চভান ভাষাবিদদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির সুপারিশে মারাঠিকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে কেন্দ্রে আবেদন করেছিলেন।

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, ‘অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে ভারত সরকার অবশেষে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে এই স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করে আসছি এবং আমরা আমাদের দাবির প্রমাণস্বরূপ তিন খণ্ড গবেষণা রিপোর্ট জমা দিয়েছিলাম।’

এদিকে এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার এক্স হ্যান্ডেলে (টুইটারে) লিখেছেন, ‘বাংলা ভাষাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্তে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বাংলা সাহিত্য যুগ যুগ ধরে অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করে আসছে। বিশ্বের সকল বাঙালিকে এই অর্জনের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।’

মারাঠি ভাষা প্রসঙ্গে মোদি বলেন, ‘মারাঠি ভাষা ভারতের গর্ব। এই বিশেষ ভাষাটিকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ায় অভিনন্দন। এই সম্মান আমাদের জাতির ইতিহাসে মারাঠি ভাষার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অবদানকে স্বীকৃতি দিলো। মারাঠি ভাষা সর্বদা ভারতীয় ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।’

‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অসমীয়া ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার অনুমোদন দেওয়ায় আমি আনন্দিত। শতাব্দী ধরে অসমীয়া সংস্কৃতি জাগ্রত ও সমৃদ্ধ। এই ভাষা আমাদের একটি ধনী সাহিত্য ঐতিহ্য উপহার দিয়েছে। আমি এই ভাষার আরও বিস্তার কামনা করি।’

পালি ও প্রাকৃত ভাষার প্রতি আলোকপাত করে তিনি বলেন, ‘পালি এবং প্রাকৃত ভাষা ভারতের সংস্কৃতির মূলে। এই দুটি ভাষা আধ্যাত্মিকতা, জ্ঞান এবং দর্শনের ভাষা। এই দুটি ভাষা তাদের সাহিত্য ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। ‘ধ্রুপদী ভাষা’ হিসেবে তাদের স্বীকৃতি ভারতীয় চিন্তাধারা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসে তাদের চিরন্তন প্রভাবকে সম্মানিত করে।’

মোদি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ধ্রুপদী ভাষা'র মর্যাদা পাওয়ার পর আরও বেশি মানুষ এই ভাষা শিখতে উৎসাহিত হবেন।’

এই সিদ্ধান্তকে ভারতের ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ধ্রুপদী ভাষার শর্তাবলী

কোনো ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করতে হয়:

• ১,৫০০-২,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভাষাটির প্রাচীন গ্রন্থ/রেকর্ডকৃত ইতিহাসের প্রাচীনতা।
• প্রাচীন সাহিত্য/গ্রন্থের একটি সমৃদ্ধ ভান্ডার যা পরবর্তী প্রজন্মের মানুষের কাছে ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
• কবিতা ছাড়াও প্রাচীন জ্ঞান সমৃদ্ধ গ্রন্থ, বিশেষ করে গদ্য রচনা, লিপি ও শিলালিপির প্রমাণ।
• ধ্রুপদী ভাষা ও সাহিত্য তার বর্তমান রূপ থেকে পৃথক হতে পারে অথবা পরবর্তী কালের অন্যান্য রূপের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে।