সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রজিউন) শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৩টার দিকে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরী এই মর্মস্পর্শী সংবাদ নিশ্চিত করেছেন।

অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী

ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় গত বুধবার (২ অক্টোবর) সকালে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তার বাবা আগে থেকেই স্কিমিক হার্ট ডিজিজেসে ভুগছিলেন। সেই হাসপাতালেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, ২ মেয়ে, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে গত বুধবার (২ অক্টোবর) তাকে উত্তরায় নিজস্ব প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মহিলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই হাসপাতালেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৭৮ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। জিয়াউর রহমান সরকারে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়নে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ বি. চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে অবস্থিত নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৪৭ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। ১৯৫৪-৫৫ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো-এফআরসিপি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফসিপিএস।

মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৮ সালে রাজনীতি শুরু করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। পরের বছর তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তবে রাজনৈতিক কারণে বছর পার না হতেই ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন বিএনপির এই প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ।

পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সালের ৮ মে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

রাজনীতির বাইরে রোগ বিজ্ঞানে দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি ছিলেন রোগ বিজ্ঞান বিষয়ে টিভি অনুষ্ঠানের রেকর্ড অর্জনকারী উপস্থাপক। সফল পার্লামেন্টেরিয়ান বি. চৌধুরী জাতিসংঘে তিনবার বক্তৃতা দেন। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন এবং বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করে গেছেন।

অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর স্ত্রীর নাম হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। তাদের বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী পেশায় একজন আইনজীবী। ছোট মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী পেশায় চিকিৎসক এবং ঢাকার উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা করেন। ছেলে মাহী বি. চৌধুরী রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য এবং মিডিয়াব্যক্তিত্ব।

চার জানাজা শেষে দাফন

সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রথম জানাজা শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮টায় উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এবং দ্বিতীয় জানাজা বাদ জোহর বারিধারার বায়তুল আতিক জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার সকাল ১০টায় শ্রীনগর স্টেডিয়ামে এবং বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি মজিদপুর দয়হাটায় চতুর্থ নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।