আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, ১১ বছরে এই প্রথম...

আগামী শুক্রবার ঢাকা সফরে আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে তিনি ঢাকায় আসবেন। প্রায় ১১ বছরের মধ্যে এটিই হবে কোনো মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর।

আনোয়ার ইব্রাহিম

গত ১৩ আগস্ট টেলিফোনে ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ওই টেলিফোন আলাপকালেই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান ড. ইউনূস। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কূটনৈতিক মাধ্যমে ইতিমধ্যে তাকে সফরের আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বর্তমান সরকারের সময়ে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের এটিই হবে প্রথম বাংলাদেশ সফর। ‘এ কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকা আসবেন মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী। প্রতিনিধিদলে থাকবেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী, পরিবহন প্রতিমন্ত্রী, ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, দুই সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।

সফরকালে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শ্রম পরিযান, উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা, ব্যবসা ও বিনিয়োগ, যোগাযোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনা হতে পারে।

২০২৫ সালে আসিয়ানের সভাপতিত্ব গ্রহণ করবে মালয়েশিয়া। তাই আসিয়ান কাঠামোর আওতায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মালয়েশিয়ার সক্রিয় সহযোগিতা চাওয়া হবে।

এছাড়াও, আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ানে ‘ক্ষেত্রভিত্তিক সংলাপ অংশীদার’ হিসেবে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে।

সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছানোর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অনুসারে আনোয়ার ইব্রাহিমকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, "বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা এবং স্থায়িত্বের সাক্ষ্য হিসেবে এই সফরকে বিবেচনা করা হবে"।

ইসলামাবাদ থেকে ফেরার পথে কিছু সময়ের জন্য ঢাকায় বিরতি দেবেন তিনি। এই সফর সম্পর্কে জানা এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সফরটি সর্বোচ্চ চার ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে।’

‘প্রধান উপদেষ্টা এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব রয়েছে। ইসলামাবাদ থেকে ফেরার পথে ঢাকায় বিরতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে এই বন্ধুত্ব কাজ করেছে।’

‘তার থাকার স্থায়িত্ব খুবই কম হলেও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ।’

আশা করা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমর্থন দেবে মালয়েশিয়া, যা বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থাকবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার, যা বৃদ্ধি করে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

শ্রম বাজার বিষয়ক আলোচনার ক্ষেত্রে একজন কূটনীতিক জোর দিয়ে বলেন, মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশ উভয় দেশেরই একই রকম চাহিদা রয়েছে।

শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে চায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে, আর বাংলাদেশের আছে শ্রমিক। তাই স্বচ্ছতার মাধ্যমে এই বিনিময় সম্পন্ন করা এখানে লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের নভেম্বরে তৎকালীন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ঢাকা সফর করেছিলেন।