পর্যটন বিকাশে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার তাগিদ পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

পর্যটন খাতের বিকাশে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাইআইএসএস অডিটোরিয়ামে ‘ট্যুরিজম ফর অ্যাটেনিং এসডিজিএস: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড প্রসপেক্টাস ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘ভিসা ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং একে পুরোপুরি অনলাইনে রূপান্তরিত করা গুরুত্বপূর্ণ। ভিসা ফি মওকুফ করলে আরও বেশি বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত এই সেমিনারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘কাজ করার অনেক সুযোগ আছে... পর্যটন উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

তিনি এমন একটি অনলাইন পদ্ধতি তৈরির ওপর জোর দেন যার মাধ্যমে বিদেশিরা সহজেই বাংলাদেশের ভিসা পেতে পারবেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে পর্যটনের অবদান বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি এবং বেসরকারি খাতের প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান।

বিআইআইএসএস এর চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গাউসাল আজম সরকার সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এবং এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব নাসরিন জাহান তার বক্তব্যে পর্যটন শিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী কৌশল বাস্তবায়নের জন্য তার মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার হিসেবে আমরা সারা দেশে দেশি-বিদেশি উভয় ধরনের পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছি।’

নাসরিন জাহান জানান, পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করার জন্য স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ট্যুরিজম রিসার্চ ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আবু সুফিয়ান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এরপর প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিআইআইএসএস এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. সুফিয়া খানম, ডিআইজি ট্যুরিস্ট পুলিশ মো. আবু কালাম সিদ্দিক এবং এফবিসিসিআই এর উপ-পরিচালক ড. মুনাল মাহবুব।

প্যানেলিস্ট এবং অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ পর্যটন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। বন, সৈকত, জলাশয়, পাহাড়, বন্যপ্রাণী, আদিবাসী সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, লোককাহিনী, হস্তশিল্প, শিল্পকলা এবং উৎসবের কথা তুলে ধরেন।

তবে তারা বলেন, জাতীয় উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে পর্যটনকে স্বীকৃতি দেওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, নিরাপত্তা উদ্বেগ, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, হোটেল, মোটেলের মতো পর্যাপ্ত থাকার ব্যবস্থার অভাব এবং যথাযথ প্রচারণা ও বিপণনের অভাবকে তারা টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন।

এই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য বক্তারা উদ্ভাবনী এবং কৌশলগত পদক্ষেপের ওপর জোর দেন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ক্ষেত্রে পর্যটনকে উল্লেখযোগ্য অবদানকারীতে রূপান্তরের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পরিবেশগত সুরক্ষা অপরিহার্য বলে তারা মনে করেন।

তিনটি পর্যটন অঞ্চল স্থাপন, গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানে সুযোগ-সুবিধা উন্নত করার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে টেকসই পর্যটন উন্নয়নকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তবুও, বক্তারা বলেন, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করার জন্য এই খাতের জন্য আরও ব্যাপক কৌশল প্রয়োজন।

পর্যটন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য, বক্তারা সরকারি নীতিমালা এবং কৌশলগত কাঠামোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করার আহ্বান জানান।

অবকাঠামোগত ঘাটতি মোকাবেলা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং পরিবহন নেটওয়ার্ক উন্নত করার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

তারা বলেন, বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে পর্যটনের পূর্ণ সম্ভাবনা বের করে আনার জন্য এই পদক্ষেপগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পর্যটন শিল্পের দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি এবং টেকসইতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতার আহ্বান জানান বক্তারা।

সেমিনারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কূটনৈতিক মিশন, গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের ধারণা ভাগাভাগি করেন এবং একগুচ্ছ সুপারিশ উপস্থাপন করেন।