কুড়িগ্রামে ভয়াবহ পরিস্থিতি: ক্লিনিক, স্কুল, ঘরবাড়ি নদীগর্ভে

কুড়িগ্রামে বন্যা ও নদীভাঙনে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে তিস্তার পানিতে জেলার একাংশ প্লাবিত, অন্যদিকে ধরলা নদীর ভাঙনে বিপন্ন মানুষের জীবন। সোমবার ভোরে ধরলার ঢেউয়ে ভেসে গেছে খুদির কুটি আক্কেল মাহমুদ কমিউনিটি ক্লিনিক। এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এটিই ছিল প্রাথমিক চিকিৎসার একমাত্র ভরসা।

ধরলার ঢেউয়ে ভেসে গেছে খুদির কুটি আক্কেল মাহমুদ কমিউনিটি ক্লিনিক

গত তিন দিনে খুটির কুটি, রসুলপুর, কবিরাজপাড়া গ্রামের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে সরেজমিনে দেখা গেছে, গত তিন দিন ধরে ভয়াবহ নদীভাঙন চলছে। একের পর এক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুদির কুটি আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় এবং আশ্রয়কেন্দ্রটিও ধরলার প্রবল স্রোত ও ভাঙনের মুখে পড়েছে।

এলাকার ৫০টিরও বেশি পরিবার গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যে ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

ইউনিয়নের বাসিন্দা ও সংগঠক মিজানুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের আল আমিন বাজার থেকে খুটির কুটি বাজার, কবিরাজপাড়া পর্যন্ত প্রবল স্রোত ও ভাঙনে ঘরবাড়ি, মসজিদ, ক্লিনিক সব ভেসে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পুরো এলাকাই নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’

আরেক বাসিন্দা নূর আলম বলেন, ‘গতরাতে (সোমবার) কমিউনিটি ক্লিনিক নদীতে চলে গেছে। কোনো উপায়ই খুঁজে পাচ্ছি না!’

সম্প্রতি বাড়ি হারানো সাবেক ইউপি সদস্য মাহবুব বলেন, ‘আমার ঘর গেল, ক্লিনিক গেল। এবার আশ্রয়কেন্দ্র, স্কুলও আর থাকবে না। এখনই যদি কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয় তাহলে অন্তত স্কুল আর আশ্রয়কেন্দ্রটা রক্ষা করা যেত।’

স্থানীয় নেতারাও রেহাই পাননি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাবলু মিয়ার বাড়িও নদীতে ভেসে গেছে। সোমবার সকালে যোগাযোগ করা হলে তিনি তখন ঘরের জিনিসপত্র সরানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘গত দুই-তিন দিনে আমার ভাইসহ অন্তত ৪০টি পরিবারের ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমিও আমার সংসারের জিনিসপত্র সরাতে বাধ্য হচ্ছি।”ৎ’

স্থানীয় বসতি এবং সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের বিষয়ে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউর রহমান বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস হওয়ায় আমি খুবই উদ্বিগ্ন। গত দুই দিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (বাপাউবো) ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলছি। আমি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করব।’

জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমি ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বাপাউবোকে বলেছি।’

কুড়িগ্রাম বাপাউবোর কার্যকরী প্রকৌশলী রকিবুল হাসান বলেন, ‘ভাঙনের খবর পেয়েছি। জিও ব্যাগ পাঠানো হয়েছে। আজ (সোমবার) থেকেই কাজ শুরু হবে।’