শীতের ঘন কুয়াশাতেও ঢাকায় অবতরণ করবে বিমান!

বেশি বৃষ্টি, ঘন কুয়াশা কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও যাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা স্বাভাবিক থাকে সেজন্য বিমানবন্দরের অবতরণ সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বিমানবন্দরের বর্তমান ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) ক্যাটাগরি-১ থেকে ক্যাটাগরি-২ এ উন্নীত করা হচ্ছে। ফলে, আগে যেসব বিমান ঘন কুয়াশা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কলকাতায় পরিবর্তিত রুটে যেতে বাধ্য হতো, এখন সেগুলো ঢাকায় অবতরণ করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই উন্নয়নের ফলে সময় সাশ্রয় হবে, অতিরিক্ত খরচ কমবে, যাত্রীসেবা মানোন্নত হবে এবং বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক সুনাম বাড়বে। এছাড়া পর্যটন ও বাণিজ্যেরও উন্নতি হবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা আইএলএস ক্যাটাগরি-২ এ উন্নীত করতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাচ্ছি এবং আশা করছি নভেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিকূল আবহাওয়াতেও শাহজালালে বিমান অবতরণ নিশ্চিত করা যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশে বিমান পরিবর্তিত রুটে অবতরণের প্রয়োজনীয়তা এড়াতেসসিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ২৪ ঘন্টা কার্যকর রাখার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।’

বেবিচকের এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সদস্য এয়ার কমোডর এ কে এম জিয়াউল হক জানান, শীতকালে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ঢাকার আকাশে ঘন কুয়াশার জন্য অনেক বিমানের রুট পরিবর্তন করতে হত কিংবা অবতরণ বাতিল করতে হতো।

তিনি আরও বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশে বিমান পরিবর্তিত রুটে অবতরণের ফলে জাতীয় রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও বিমান সংস্থাগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং যাত্রীদেরও অনেক অসুবিধার শিকার হতে হয়। এটি দেশের সুনামের ওপরও প্রভাব ফেলে। তাই আইএলএস ক্যাটাগরি-২ তে উন্নীতকরণ আমাদের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।’

জিয়াউল হক আরও জানান, শীতকাল শুরুর আগেই এই উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ হবে। ফলে বিমানের রুট পরিবর্তনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে এবং বিমান চলাচল অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘একটি দেশের বিমান খাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার অংশ। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবা মানোন্নয়নের জন্য এই উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম হলো একটি রেডিও নেভিগেশন সিস্টেম যা রাতের বেলা বা প্রতিকূল আবহাওয়ার সময় বিমান অবতরণের জন্য স্বল্প পরিসরের নির্দেশনা প্রদান করে।

বর্তমানে ঢাকা বিমানবন্দরে আইএলএস ক্যাটাগরি-১ সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে। বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেলে জেনারেটর চালু করে ক্যাটাগরি-১ আইএলএস চালু করতে ৮ সেকেন্ড সময় লাগে। এই বিলম্বের কারণে পাইলটরা এই সিস্টেমের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারেন না, কারণ ৮ সেকেন্ড সময় কম দৃশ্যমানতায় আইএলএস সহায়তা ছাড়া বিমান অবতরণ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। আইএলএস ক্যাটাগরি-২ চালু হলে পাইলটদের এই ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে না। ঘন কুয়াশা বা প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও আইএলএস ক্যাটাগরি-২ সিস্টেম সঠিক রেডিও সংকেত প্রদান করে পাইলটদের নিরাপদে বিমান অবতরণে সহায়তা করবে।

আইএলএস ক্যাটাগরি-১ এর সীমাবদ্ধতার কারণে, শীতকালে ঘন কুয়াশার সময় স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় রুটের বিমান চলাচল প্রায়ই বন্ধ থাকে। এতে সারা দিনের বিমান সময়সূচী ব্যাহত হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কুয়াশা পড়ে, যার ফলে দৃশ্যমানতা কমে যায় এবং বিমান অবতরণে ব্যাঘাত ঘটে। বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও মেঘের কারণেও বিমান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।

অক্টোবরে কাজ শুরু

আইএলএস উন্নয়নের কাজ অক্টোবরে শুরু হবে। ১ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত রাতের বেলা সাড়ে তিন ঘণ্টা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে।

বিমানবন্দরের কার্যনির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এম. কামরুল ইসলাম রবিবার জানান, আইএলএস ক্যাটাগরি-২ সংক্রান্ত রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ১৪ দিন রাত ১টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত রানওয়ে বন্ধ থাকবে।

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর

বেবিচক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, শীতকালে ঘন কুয়াশার সময় দেশের বাইরে বিমান পরিবর্তিত রুটে যাওয়া প্রতিরোধ করতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘন্টা কার্যকর থাকবে।

বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সিলেট বিমানবন্দর এবং রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ২৪ ঘন্টা কার্যকর থাকবে।

বিমান বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছি। ঘন কুয়াশার কারণে প্রায়ই বিমান চলাচল বন্ধ কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশে পরিবর্তিত রুটে যেতে হয়, যার ফলে বিমান সংস্থাগুলো বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই আধুনিকীকরণ আগেই হওয়া উচিত ছিল। শীতের আগেই যদি এটি শেষ করা যায়, তবে এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো পদক্ষেপ হবে। তবে সময়মতো কাজ শেষ হবে কিনা সে বিষয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেশন্স পরিচালক ক্যাপ্টেন মো. সিদ্দিকুর রহমান এই উন্নয়নকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করে বলেন, এটি অবতরণের জন্য দৃশ্যমানতার সীমা উন্নত করবে।

‘আগে যদি দৃশ্যমানতা খুব কম থাকত, তাহলে বিমানগুলোকে কলকাতায় অবতরণ করতে হতো। এখন তারা শাহজালালেই অবতরণ করতে পারবে। এটি ঢাকা বিমানবন্দরের ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে,’  আরও যোগ করেন তিনি।

ঢাকা ট্রিবিউন থেকে অনূদিত