জলবায়ু বিপর্যয়: বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘের ১৩৪ কোটি ডলারের জরুরি আবেদন

বাংলাদেশে চলমান এবং ক্রমবর্ধমান ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষাকালীন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি ত্রাণ ও সহায়তা প্রদানের জন্য জাতিসংঘ এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলো ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের একটি মানবিক আবেদন জানিয়েছে। রবিবার এই আবেদন করার সময় জাতিসংঘ জানিয়েছে, পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং তাৎক্ষণিক মনোযোগ প্রয়োজন।

ছবি - সংগৃহীত

গত মে মাস থেকে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় রেমাল, হাওর অঞ্চলের বন্যা, যমুনা অববাহিকায় নদীভাঙন এবং পূর্বাঞ্চলের বন্যা – এই চারটি ভয়াবহ জলবায়ু-জনিত দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। এর ফলে দেশের ৪৫ শতাংশ জুড়ে ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জীবিকা ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এই বহুমুখী মানবিক প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনাটি সরকারের নেতৃত্বে একটি পরামর্শমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি। এর লক্ষ্য ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সবচেয়ে জরুরি চাহিদা পূরণ করা। ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর জুন মাসে প্রথম একটি মানবিক আবেদন করা হয়েছিল। এটি সেই পরিকল্পনার তৃতীয় সংস্করণ, যা চারটি জরুরি অবস্থাকে কভার করার জন্য বর্ধিত করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা ২৮টি জেলার ২৫ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এখন পর্যন্ত মাত্র ২৮ শতাংশ তহবিল পাওয়া গেলেও ১৮ লাখ মানুষকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই সংশোধিত পরিকল্পনাটি সরকার, জাতিসংঘ এবং বেসরকারি অংশীদারদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সমন্বয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মও প্রদান করে।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান এই পরিকল্পনাটির উদ্বোধন করেছেন।

লুইস বলেছেন, ‘এটি বাংলাদেশে একটি অভূতপূর্ব মানবিক সংকট।’

কামরুল হাসান জোর দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে দুর্যোগের মাত্রা এবং ঘন ঘন বেড়ে চলেছে, এবং আমাদেরকে জলবায়ু সংকটের সম্মিলিত সমাধানের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং সমর্থন করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’

এই সংশোধিত পরিকল্পনায় শিশু সুরক্ষা, শিক্ষা, বাস্তুচ্যুত ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও পুষ্টি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ এবং টয়লেট পুনর্নির্মাণের মতো জরুরি চাহিদাগুলো সমাধান করা হয়েছে। এতে নারী, শিশু, হিজড়া, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্কদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ অক্টোবরে দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের আশঙ্কা করছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বছর শেষ হওয়ার আগে সম্প্রদায়গুলো সম্ভাব্য আরও চরম আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে।