ইউনূস-ব্লিঙ্কেন বৈঠক: বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মার্কিন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের এক হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ‘আমরা ভালো অংশীদার হতে চাই। বাংলাদেশের জন্য আমরা দ্রুত কাজ করব,’ বলেছেন ব্লিঙ্কেন।

বৈঠকের ছবি

শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার একজন মুখপাত্র জানান, বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি 'অসীম' সম্মান প্রদর্শন করেছেন এবং জাতির জন্য এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার নেতৃত্ব গ্রহণকে প্রশংসা করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হলো দেশ পুনর্গঠন। দেশের অর্থনীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করার জন্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং ইউএসএআইডের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

‘এটা খুব দ্রুত করতে হবে। সমগ্র জনগণ তার সরকারের পেছনে ঐক্যবদ্ধ এবং যত দ্রুত সম্ভব দেশ পুনর্গঠনের অপেক্ষায় আছে,’ বলেছেন তিনি।

বৈঠকে সরকার কর্তৃক গৃহীত সংস্কার, দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা, বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা, শ্রমিক ইস্যু, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন ও আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকারের আমলে দেশ দুর্নীতির সমুদ্রে ডুবে ছিল। দুর্নীতি দমন আমার প্রথম অগ্রাধিকার।’

‘পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা বিদেশে পাচার করা কোটি কোটি ডলার ফেরত আনার জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন। পাচার করা অর্থের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘এটি বিশাল পরিমাণ অর্থ। অবিশ্বাস্য!!’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘আমরা সাহায্য করতে পেরে খুশি। স্থায়ী দুর্নীতি মোকাবেলায় আমাদের প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে।’

শ্রমমান উন্নয়ন সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এটি দেশে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগের পথ সুগম করবে বলে তিনি মনে করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস এবং আগামী বছরগুলিতে এটি আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করছেন।

বৈঠকে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত বর্বরতার তদন্তকারী জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, তার সরকার বাক স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বজায় রেখেছে। যথাসাধ্য সমালোচনা করার জন্য তিনি গণমাধ্যমকে অনুরোধ করেছেন।

‘সমগ্র বাংলাদেশ একটি বড় পরিবার। আমাদের মধ্যে মতভেদ আছে। কিন্তু আমরা শত্রু নই,’ বলেছেন তিনি।

দুই নেতা রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের শিবিরগুলিতে বেড়ে উঠা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শিশুর জন্য প্রধান উপদেষ্টা সহযোগিতা কামনা করেছেন।