মিথ্যা খুনের দায়ে ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে ৫৬ বছর!

দীর্ঘ ৫৬ বছর ধরে ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে এরইমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী কারাবন্দী হিসেবে জুটেছে তকমা। এতকিছুর পর এসে জানা গেলো, তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ছিল মিথ্যা। পুনরায় বিচারে আদালত তাকে দিলেন খালাস। এই ঘটনা ঘটেছে জাপানে। খবর বিবিসির।

৯১ বছর বয়সী বোন হিডেকোর সঙ্গে ৮৮ বছরের হাকামাদা

জাপানের শিজুওকার আদালতে খালাস পাওয়া সেই ব্যক্তি হলেন ইওয়াও হাকামাদা। ৮৮ বছরের হাকামাদা বর্তমানে তার বোন ৯১ বছর বয়সী হিডেকোর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। টোকিওতেই বাস করছেন তারা।

জাপানের দীর্ঘতম ও সবচেয়ে বিখ্যাত আইনী কাহিনীগুলোর মধ্যে একটি হাকামাদার মামলাটি। হাকামাদার জীবনের এতটা বছর কে ফিরিয়ে দেবে- এমন প্রশ্নের কোনো জবাব না মিললেও বৃহস্পতিবার শিজুওকার আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন।

আদালতে রায় ঘোষণার সময় হাকামাদা উপস্থিত থাকতে না পারলেও অন্তত ৫০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন আদালতের বাইরে। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হাকামাদার সমর্থকরা ‘বানজাই’ বানজাই (হুররে) বলে সোল্লাস করেছেন।

সাবেক পেশাদার বক্সার ইওয়াও হাকামাদাকে ১৯৬৮ সালে তার বস, বসের স্ত্রী ও তাদের দুই কিশোর সন্তানকে হত্যা করা এবং তাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৬ সালে, যখন হাকামাদা টোকিওর একটি মিসো প্রসেসিং প্ল্যান্টে কাজ করছিলেন।

টোকিওর পশ্চিমে শিজুওকায় ওই প্ল্যান্ট মালিকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। জ্বলন্ত ঘরের মধ্যে থেকে তার নিয়োগকর্তা, লোকটির স্ত্রী এবং দুই সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। চারজনকেই ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ একপর্যায়ে হাকামাদার বিরুদ্ধে ওই পরিবারকে হত্যা, তাদের বাড়িতে আগুন লাগানো এবং নগদ ২ লাখ ইয়েন চুরির জন্য অভিযুক্ত করে।

হাকামাদা প্রাথমিকভাবে ছিনতাই ও হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেন। কিন্তু তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাকে মারধর ও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছিলেন। স্বীকারোক্তি পেয়ে আদালত ১৯৬৮ সালে হাকামাদাকে হত্যা ও অগ্নিসংযোগের জন্য দোষী সাব্যস্ত এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

দীর্ঘ ৪৬ বছর বন্দি থাকার পর মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়া হাকামাদাকে ২০১৪ সালে কারামুক্তি দিয়ে তার বোনের জিম্মায় দেওয়া হয়।

কারামুক্তিরও ১০ বছরের মাথায় এসে সম্প্রতি জানা যায়, হাকামাদার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত প্রমাণগুলো ছিল বানোয়াট। পরে আদালত, বিষয়টি পুনরায় বিচারের সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে শেষপর্যন্ত ফাঁসির রায় থেকে বেকসুর খালাস পেলেন হাকামাদা।