আইএমএফের দ্বারস্থ হচ্ছে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট

শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়কে বুধবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ২.৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি নিয়ে ‘অবিলম্বে’ আলোচনা পুনরায় শুরু করা হবে। গত সপ্তাহে ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া দিশানায়কে তার নির্বাচনী প্রচারণায় কর বৃদ্ধি প্রত্যাহার, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি এবং আইএমএফের সঙ্গে পূর্ববর্তী সরকারের করা ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

শ্রীলঙ্কার পতাকা

২০২৩ সালের ঋণচুক্তির ফলে শ্রীলঙ্কায় খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের তীব্র সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এর কঠোর শর্তাবলীর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবনযাত্রার জন্য হিমশিম খাচ্ছে।

‘আমরা অবিলম্বে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার পরিকল্পনা করছি,’ জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন দিশানায়কে।

তিনি তার ১০ মিনিটের ভাষণে আরও বলেন, তিনি আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড পুনর্গঠনের জন্য একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে এবং নগদ-সংকটে থাকা দেশটির জন্য আরও ঋণ নিশ্চিত করতে চান।

‘ঋণ পুনর্গঠন কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনা করছি যাতে প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করা যায় এবং প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করা যায়,’ বলেন তিনি।

‘আমরা প্রেসিডেন্ট দিশানায়কের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করছি... যাতে শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে নিয়ে যাওয়া কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখা যায়,’ ওয়াশিংটনে আইএমএফের একজন মুখপাত্র সোমবার বলেন।

‘আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন প্রশাসনের সঙ্গে আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির তৃতীয় পর্যালোচনার সময় নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করব,’ বলেন মুখপাত্র।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, চুক্তির শর্তাবলী পুনর্গঠন করার জন্য দিশানায়কের হাতে খুব বেশি সুযোগ নেই।

‘কিছু লাল রেখা আছে যা আইএমএফ আলোচনার জন্য রাজি হবে না,’ বলেন কলম্বো-ভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাডভোকাটার মুর্তজা জাফরজী।

আইএমএফ তার ২.৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তির মূল উপাদানগুলো, যার মধ্যে অর্থ ছাপানো নিষিদ্ধ করা এবং পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে সম্মত আয় ও ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্ত, সেগুলো থেকে সরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম বলে তিনি জানান।

সংকট থেকে সুযোগ

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় এবং যার ফলে আইএমএফ ঋণ নিতে বাধ্য হয় দেশটি, সেই সংকটই অনুরা কুমারা দিশানায়কের জন্য সুযোগ বয়ে এনেছে। দ্বীপরাষ্ট্রটির ‘দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি জনসমর্থন আদায় করে নিয়েছেন।

শনিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দিশানায়কে ৩৮ প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১২ লক্ষেরও বেশি ভোট পেয়েছেন।

অন্যদিকে, আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী কর বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনঅসন্তোষের মুখে পড়েন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। এবারের নির্বাচনে তিনি তৃতীয় স্থান অর্জন করতেও ব্যর্থ হন।

মঙ্গলবার দিশানায়কে ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন। যেখানে তার দলের মাত্র তিনটি আসন ছিল। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর আগে আগামী ১৪ নভেম্বর নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।