জয়: আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে সংস্কার-নির্বাচন অসম্ভব

সেনাপ্রধানের দেওয়া ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা প্রত্যাশার চেয়ে দীর্ঘ হলেও তা গ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিদেশে অবস্থানরত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে প্রকৃত সংস্কার ও নির্বাচন কোনোটাই সম্ভব নয়।

সজীব ওয়াজেদ জয়

সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রয়টার্সকে বলেছেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার রাতে রয়টার্সকে ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘অন্তত এখন একটি প্রত্যাশিত সময়সীমা পাওয়া গেছে, এটা শুনে আমি খুশি।’ 

‘কিন্তু অতীতে আমরা দেখেছি, অসাংবিধানিক, অনির্বাচিত সরকার যখন সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর সমর্থনে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে এবং দুই বছর পর হাসিনা ক্ষমতায় আসার পূর্ব পর্যন্ত দেশ শাসন করে।

হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ বাহিনী বিশৃঙ্খল হয়ে পড়লে, সেনাবাহিনী পরবর্তী ঘটনাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সেনাবাহিনী স্থিতিশীলতার প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য তিনি প্রতি সপ্তাহে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল, হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে।

নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে নির্বাচনের তারিখ এখনও নির্ধারণ করেনি।

ড. ইউনূসের কার্যালয় জানিয়েছে, ছয়টি সংস্কার কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।

‘সংস্কারের বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর, ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হবে,’ এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

বিএনপি জানিয়েছে, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন চায়।

ওয়াশিংটনে বসবাসকারী জয় বলেন, তিনি বা অন্তর্বর্তী  সরকার, ১৭ কোটি মানুষের দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্য একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে পুরনো এবং বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে বৈধ সংস্কার এবং নির্বাচন অসম্ভব।’

গত মাসে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে হাসিনা দিল্লির কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের আরও অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অথবা তারা আত্মগোপন করেছেন।

হাসিনার পতনের পর থেকে অনেক আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ওয়াজেদ বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা তার বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।

নির্বাচন সংস্কার কমিটির প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, পর্যালোচনা শেষে তিন মাসের মধ্যে সুপারিশ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করবে কিনা অথবা নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করবে, তা সরকার ঠিক করবে।’

গত মাসে জয় রয়টার্সকে বলেছিলেন যে হাসিনা বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত, যা আন্দোলনকারী ছাত্ররা দাবি করেছিল। তিনি এও বলেন যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে লড়াই করতে চায়।

মঙ্গলবার, হাসিনা কবে দেশে ফিরবেন জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ‘সেটা তার ওপর নির্ভর করবে। এখন আমি আমার দলের লোকজনকে নিরাপদ রাখতে চাই, তাই আমি এই ইউনূস সরকারের দ্বারা তাদের ওপর চালানো নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা তৈরি করতে চাই।’