এরদোয়ানের তীব্র সমালোচনা: নেতানিয়াহুকে থামাতেই হবে

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান মঙ্গলবার জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, নেতানিয়াহুকে থামানোর জন্য, যেমনভাবে বহু বছর আগে নাৎসি স্বৈরাচারী অ্যাডলফ হিটলারকে থামানো হয়েছিল।

রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

“ইসরায়েলের মনোভাব আবারও প্রমাণ করেছে যে ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি পদ্ধতি তৈরি করা অপরিহার্য,” এ কথা বলেন এরদোয়ান।

“যেমনভাবে ৭০ বছর আগে মানবতার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় হিটলারকে থামানো হয়েছিল, তেমনি নেতানিয়াহু এবং তার হত্যাকারী চক্রকেও মানবতার ঐক্যবদ্ধ শক্তিতেই থামাতে হবে।”

তিনি ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিকে জাতিসংঘে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "দীর্ঘ সংগ্রামের পর ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিকে জাতিসংঘে তাদের প্রাপ্য স্থানে দেখতে পেয়ে আমি আনন্দিত।”

“এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ যেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ লাভের পথে শেষ ধাপ হয়। আমি অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোকেও যারা এখনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের যত দ্রুত সম্ভব তা করার জন্য এবং এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ইতিহাসের সঠিক পক্ষে স্থান নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।”

জাতিসংঘের তীব্র সমালোচনা

এরদোয়ান জাতিসংঘের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, জাতিসংঘ তার প্রতিষ্ঠাতা নীতিমালা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং “ধীরে ধীরে একটি অকার্যকর, জটিল এবং নিষ্ক্রিয় কাঠামোতে পরিণত হয়েছে।”

“আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তা মাত্র পাঁচটি সুবিধাভোগী দেশের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না।”

জাতিসংঘের সংস্কারের দাবিতে এরদোয়ান দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার এবং প্রায়শই ‘বিশ্ব পাঁচজনের চেয়েও বড়’ স্লোগান ব্যবহার করেন, যা নিরাপত্তা পরিষদের অপ্রতিনিধিত্বমূলক সদস্যপদের প্রতি ইঙ্গিত করে।

‘এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো গাজায় ৩৫৩ দিন ধরে চলা গণহত্যা।’

'শুধু শিশুরা নয়; জাতিসংঘও গাজায় মারা যাচ্ছে'

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আক্রমণ প্রসঙ্গে এরদোয়ান বলেন, গত ৭ই অক্টোবর থেকে যখন থেকে ইসরায়েল তাদের নির্মম আক্রমণ শুরু করেছে, তখন থেকে এখন পর্যন্ত ৪১,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

“১৭,০০০ এরও বেশি শিশু ইসরাইলী বুলেট এবং বোমার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”

“১০,০০০ এরও বেশি গাজাবাসীর, যাদের বেশিরভাগই শিশু, তাদের ঠিকানা এখনও অজানা।”

“১৭২ জন সাংবাদিক কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের কাজ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।”

“ক্ষুধা ও তৃষ্ণার্ত গাজার মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা মানবিক সাহায্যকর্মী এবং ২১০ জনেরও বেশি জাতিসংঘ কর্মী নিহত হয়েছেন।”

“জাতিসংঘের মঞ্চেই জাতিসংঘের সনদ ছিঁড়ে ফেলে তারা নির্লজ্জভাবে সমগ্র বিশ্বকে, বিবেকবান সকল মানুষকে এই মঞ্চ থেকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।”

“ইসরায়েল যেসব কারাগারকে ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে’ পরিণত করেছে, সেখান থেকে ফাঁস হওয়া ছবিগুলো স্পষ্টভাবেই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আমরা কি ধরনের নিপীড়নের মুখে পড়েছি।”

“ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে গাজা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিশু ও নারীদের কবরস্থানে পরিণত হয়েছে।”

“শত শত গাজার শিশু এ পর্যন্ত মারা গেছে কারণ তারা এক টুকরো শুকনো রুটি, এক ফোঁটা জল অথবা এক বাটি স্যুপও পায়নি।”

“এই নিষ্ঠুরতা, এই বর্বরতা বন্ধ করুন।”

“যারা গাজায় আছেন, যারা পশ্চিম তীরে আছেন তারা কি মানুষ নন? ফিলিস্তিনের শিশুদের কি রাস্তায় পড়াশোনা, বেঁচে থাকা এবং খেলার অধিকার নেই?"

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে গাজায় ‘গণহত্যা’ রোধ করার জন্য এবং ‘এই নিষ্ঠুরতা, এই বর্বরতা বন্ধ করার জন্য’ তিনি আহ্বান জানান।

“তারা যে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে যাতে তাদের নিজস্ব নাগরিকদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়ছে, যা সমগ্র অঞ্চলকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের থামাতে আর কতদিন অপেক্ষা করবেন?”

তিনি যেসব দেশ ‘বিনা শর্তে’ ইসরায়েলকে সমর্থন করে, তাদেরও সমালোচনা করেন।

“আপনারা কতদিন এই গণহত্যা দেখে লজ্জিত না হয়ে, তাদের সহযোগী হিসেবে থাকবেন?”

“যখন গাজা, রামাল্লা এবং লেবাননে শিশুরা মারা যাচ্ছে, বর্বরতা এবং শিশুরা ইনকিউবেটরে মারা যাচ্ছে, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি ‘খুব খারাপ উদাহরণ’ স্থাপন করেছে।”

“আমি এখানে স্পষ্টভাবে একটি সত্য বলতে চাই। মৌলিক মানবাধিকারকে উপেক্ষা করে ইসরাইলী সরকার জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে, একটি জাতি, একটি মানুষের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গণহত্যা চালাচ্ছে এবং তাদের ভূখণ্ড ধাপে ধাপে দখল করে নিচ্ছে।”

“ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এই আক্রমণের একমাত্র কারণ হলো কিছু দেশের ‘বিনা শর্তে’ ইসরায়েলকে সমর্থন করা।”

“যেসব দেশের ইসরায়েলের ওপর প্রভাব আছে, তারা ‘খোলাখুলিভাবে এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে এবং দুই নৌকায় পা রাখার নীতি অবলম্বন করে এগোচ্ছে।”

“যারা প্রকাশ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছে বলে দাবি করে, তারা পেছন থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে যাচ্ছে যাতে তারা তাদের গণহত্যা চালিয়ে যেতে পারে। এটা সম্পূর্ণ ভণ্ডতা এবং অসঙ্গতি।” 

আনাদোলু এজেন্সি অবলম্বনে