র‍্যাবের ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে র‍্যাবের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০২১ সালে এক নারী চিকিৎসককে অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে এই মামলা হয়েছে।

র‍্যাবের লোগো

এই প্রথম ট্রাইব্যুনালে অপহরণ ও গুমের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলো। মামলার বাদী চিকিৎসক ইশরাত রফিক ইশিতা অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের ২৮ জুলাই রাজধানীর কাফরুলের বাসা থেকে তাকে অপহরণ করে র‍্যাব সদস্যরা।

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন র‍্যাবের তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার আলী আশরাফ, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ রাকিব এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আখতারুজ্জামান।

ইশরাতের অভিযোগ, র‍্যাব সদস্যরা তাকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে নির্যাতন করে। পাঁচ দিন পর ১ আগস্ট, ২০২১ তারিখে র‍্যাব তাকে সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির করে।

পরদিন ২ আগস্ট, ২০২১ তারিখে ইশরাতকে 'ভুয়া চিকিৎসক' হিসেবে চিহ্নিত করে মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত তিনটি মামলায় ফাঁসানো হয়। ইশরাতের দাবি, এসব মামলা সম্পূর্ণ বানোয়াট।

এই মামলাটি দিয়ে ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো ৩০। উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে অধিকাংশ মামলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা হচ্ছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি অভিযোগ জমা পড়েছে। ১৮ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত ডা. সজিব সরকার এবং শেখ আসহাবুল ইয়ামিনের মৃত্যুর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ডা. সজিব সরকারের বাবা হালিম সরকার পুলিশ সদস্যসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে তার ছেলেকে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।

২০২০ সালে তাহেরুন্নেসা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করা সজিব রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় পুলিশ গুলিতে নিহত হয়।

‘তারা আমার নিরপরাধ ছেলেকে হত্যা করেছে, আমি এর বিচার চাই,’ মামলা দায়েরের পর সাংবাদিকদের বলেন হালিম সরকার।

আরেকটি অভিযোগে, ইয়ামিনের চাচা মো. আব্দুল্লাহ আল মুন কাদির শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, জুনাইদ আহমেদ পলক এবং মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের আওতায় গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাভার থেকে পুলিশ ইয়ামিনকে আটক করে এবং কাছ থেকে বুকে গুল ছোঁড়ে। পুলিশ ইয়ামিনের মরদেহ টেনে হিঁচড়ে সাঁজোয়া গাড়িতে তুলে , রাস্তায় ফেলে দিয়ে পার্শ্ববর্তী ডিভাইডারে ফেলে যায়। এই ভয়াবহ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ইয়ামিনকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত घोষণা করেন।

১৮ জুলাইয়ের এই বর্বর ঘটনায় বিচারের দাবিতে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া গড়ে ওঠে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ৩(২), ৪(১) এবং ৪(২) ধারায় বিচার চাওয়া হচ্ছে।