অমিত শাহের হুমকি, ‘ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে’

ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সরকার গঠনের পর রাজ্যটিতে থাকা প্রতিটি 'বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী' কে উল্টো করে ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক টেলিগ্রাফ শনিবার অমিত শাহের এই হুমকির কথা উল্লেখ করেছে।

অমিত শাহ

শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের সাহিবগঞ্জ জেলায় এক নির্বাচনী প্রচারণায় অমিত শাহ ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ বিরুদ্ধে আরও কিছু ভিত্তিহীন ও উস্কানিমূলক মন্তব্য করেন।

লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি করেন শাহ। ১৫ সেপ্টেম্বর মোদি ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনায় আদিবাসী জনসংখ্যা হ্রাস এবং ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ জনসংখ্যা বৃদ্ধির অভিযোগ করেন।

অমিত শাহ বলেন, ‘এই ভূমি আদিবাসীদের, কিন্তু এখানে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আদিবাসীদের সংখ্যা ৪৪% থেকে কমে ২৮% হয়ে গেছে। যেহেতু অনুপ্রবেশকারীরাই ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ভোট ব্যাংক, তাই বর্তমান সরকার জনকল্যাণের পরিবর্তে অনুপ্রবেশকারীদের কল্যাণে ব্যস্ত।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, পাকুড় জেলায় ‘হিন্দুরা ঝাড়খণ্ড ছাড়ো’ স্লোগান তোলা হচ্ছে।

‘আমি আপনাদের সকলের কাছে ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সরকার গঠনের আবেদন জানাচ্ছি এবং আমরা প্রতিটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে উল্টো করে ঝুলিয়ে তাদের ঠিক করে দেব,’ হুমকি দেন শাহ।

‘আমি ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে এবং কেন্দ্র খুব শীঘ্রই ঝাড়খণ্ড সরকারের সাহায্যে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করবে,’ বলেন শাহ।

শুক্রবারের নির্বাচনী প্রচারণা ছিল ঝাড়খণ্ডে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে, দাবি করে বিজেপি।

‘কী পরিবর্তন?... ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তনের জন্য নয়, এমনকি বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার জন্যও নয়... এই দুর্ণীতিগ্রস্ত সরকারকে সরিয়ে এমন একটি সরকারকে আনতে হবে যারা দুর্নীতি রোধ করতে পারে,’ আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামী সিধু কানহুর জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত সাঁওতাল পরগনার ভগনাডিহিতে এক জনসভায় বলেন শাহ।

হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার অভিহিত করে শাহ বলেন, ‘হেমন্ত সরকার দুর্নীতি ছাড়া আর কিছুই করেনি। এটি দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার।’

তিনি উপস্থিত জনগণকে জিজ্ঞাসা করেন যে কেউ কি ৩৫০ কোটি টাকা দেখেছেন? এরপর তিনি বলেন, কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য ধীরাজ সাহুর বাড়ি থেকে ৩৫০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।

‘এই টাকা মদের জন্য ছিল না বরং রাজ্যের দরিদ্র মানুষের ছিল,’ দাবি করেন শাহ।

তিনি আরও অভিযোগ করেন যে কংগ্রেস নেতা (প্রাক্তন ক্যাবিনেট মন্ত্রী) আলমগীর আলমের একজন কর্মচারী এবং ব্যক্তিগত সচিবের বাড়ি থেকে ৩৫ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন যে সরকার ১,০০০ কোটি টাকার এমজিএনআরইজিএ কেলেঙ্কারি, ৬০০ কোটি টাকার জমি কেলেঙ্কারি, ১,০০০ কোটি টাকার খনি কেলেঙ্কারি এবং ৪০ কোটি টাকার মদ কেলেঙ্কারিসহ বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারিতে জড়িত।

আদিবাসী কল্যাণের জন্য বাজেট বৃদ্ধির জন্য মোদি সরকারের প্রশংসা করে শাহ বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে, আদিবাসী কল্যাণের জন্য বাজেট ছিল মাত্র ৩০,০০০ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ সালে, আদিবাসী কল্যাণের জন্য ১,৩০,০০০ কোটি টাকার বাজেট রাখা হয়েছে।’

তিনি ঘোষণা করেন যে রাজ্যে যদি বিজেপি সরকার গঠিত হয়, তাহলে ৬৩,০০০ গ্রামকে রাস্তা দিয়ে সংযুক্ত করা হবে এবং ৭৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন।

ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং দলের মুখপাত্র সুপ্রিয় ভট্টাচার্য অমিত শাহের অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ঝাড়খণ্ডের জনগণ বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনিত্তের দ্বারা প্রভাবিত হবে না এবং বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিধায়কদের উল্টো করে ঝুলিয়ে দেবে।’