পার্বত্য অঞ্চলে উত্তেজনা: যা বলছে আইএসপিআর

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে চলমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সতর্ক করে দিয়েছে যে, পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তা পার্বত্য জেলাগুলোতে তীব্র দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের লোগো

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে সাধারণ জনগণকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে পরিস্থিতি শান্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

কীভাবে শুরু হলো সহিংসতা

আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার খাগড়াছড়ি জেলায় মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় মো. মামুন (৩০) নামে এক যুবক নিহত হন। এরপর স্থানীয় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি যখন দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করে, তখন ইউপিডিএফের (মূল) কিছু সন্ত্রাসী মিছিলকারীদের ওপর হামলা চালায় এবং ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এর প্রতিশোধ হিসেবে ক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

“সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের ছয়জন আহত হন এবং তাদেরকে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা আগুন নেভাতে সহায়তা করে। এরপর খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশেপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।”

স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরও উসকে দেয়। খাগড়াছড়ি জেলায় দ্রুত আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা ও পানছড়ি জুড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর যৌথ টহল পরিচালিত হবে।

খাগড়াছড়ি শহরের শনিরভর এলাকায় একজন সংকটাপন্ন রোগীকে স্থানান্তরের চেষ্টা করলে খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল ইউপিডিএফের নেতৃত্বে উত্তেজিত জনতার বাধার সম্মুখীন হয়। একপর্যায়ে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা সেনা টহল দলের ওপর গুলি চালায়, আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। এতে তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

একই ধরনের ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে উচ্ছৃঙ্খল জনতা মোটরসাইকেলে কয়েকজন যুবককে থামিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায় এবং লাঠি দিয়ে পেটায়। উত্তেজিত জনতা ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয়েও ভাঙচুর চালায়।

শুক্রবার সকালে পিসিজেসএসের (পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি) সমর্থনে হিল স্টুডেন্টস কাউন্সিল “দ্বন্দ্ব ও বৈষম্যমুক্ত পার্বত্য ছাত্র আন্দোলন” এর ব্যানারে রাঙামাটি জেলায় সমবেত হয়।

এসময় ৮০০-১০০০ ক্ষুব্ধ মানুষ বনরুপা এলাকার দিকে মিছিল নিয়ে যায়। তারা মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালায়। এতে উভয় পক্ষের অনেকে আহত হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাঙামাটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।