সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা: নতুন সমস্যার আশঙ্কা ফখরুলের

বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই পদক্ষেপের ফলে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশব্যাপী সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার প্রতিফলন।

‘সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এটি একটি উদ্বেগজনক পদক্ষেপ, কারণ এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়। এটি আরও ইঙ্গিত দেয় যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না,’ বলেন বিএনপি নেতা।

ফখরুল বলেন, ‘শুধুমাত্র যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে সেসব এলাকায় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যেসব এলাকায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন, সেখানে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান যুক্তিসঙ্গত হবে না এবং এর ফলে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করেন। তারা যেন এমন কোনো পদক্ষেপ না নেন যা পরিণামে তাদের জন্যই ক্ষতিকর হবে এবং দেশের রাজনীতি ও জনগণের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে।’

প্রেসক্লাবের ভিআইপি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ফখরুল ছাত্রনেতৃত্বাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে অন্তর্বর্তী সরকার সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে।’

‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংসদ গঠিত হবে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন আমাদের প্রকৃত অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিতে পারে। গণতন্ত্র মানে হচ্ছে নির্বাচিত সরকার এবং একটি কার্যকর সংসদ,’ বলেন তিনি।

ফখরুল আরও বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে রাজনীতিবিদদের তাদের রাজনৈতিক কর্তব্য পালন করার সুযোগ দেওয়া।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসন ব্যবস্থার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সকলের সমর্থনে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। তারা (সরকার) শেখ হাসিনার প্রশাসনের সময় সংঘটিত অপরাধগুলোর বিচার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। শেখ হাসিনা ছিলেন এই অপরাধগুলোর প্রধান হোতা এবং তার নির্দেশেই হাজার হাজার মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।’

ফখরুল উল্লেখ করেন যে, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে নিপীড়ন-নির্যাতন সাম্প্রতিক ছাত্র ও গণ-আন্দোলনের অনেক আগে, ২০১২ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল।’

তিনি দাবি করেন, ‘বিএনপির ৭০০ জনেরও বেশি সদস্যকে গুম করা হয়েছে এবং ‘আয়না ঘরে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়াও, হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের দলও সংস্কার চায়, কারণ আমরা এমন একটি পরিস্থিতি দেখতে চাই না যেখানে মানুষকে অন্যায় ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়।’

‘আর কোনো গুলি আর শিশু হত্যা চলবে না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করার জন্য এবং তাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আমি অনুরোধ জানাচ্ছি,’ বলেন তিনি।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্রনেতৃত্বাধীন গণ-আন্দোলনের কথা বলতে গিয়ে ফখরুল আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

‘এটা আমার কাছে সত্যিই হৃদয়বিদারক। এই অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির একজন ছাত্র উপস্থিত রয়েছেন যিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিতে আহত হয়েছিলেন। অনেক পিতা এখানে উপস্থিত আছেন যারা তাদের সন্তানদের হারিয়েছেন এবং জানেন না যে কেন তাদের ছেলেরা শহীদ হয়েছে। অনেকে আছেন যারা তাদের চোখের জ্যোতি হারিয়েছেন বা অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন। আমাদের স্বাধীন দেশে এসব আমাদের দেখতে হয়েছে,’ আক্ষেপ করে বলেন তিনি।

বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অসংখ্য মানুষ তাদের ব্যবসা ও জমি হারিয়েছে এবং অনেকে তাদের চাকরি হারিয়েছে।’

‘নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এই বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে হবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকে স্পষ্টভাবে এই কথা বলছি। গত ১৫-১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে অপসারণের জন্য আমাদের সংগ্রামে আমরা ত্যাগ স্বীকার করেছি এবং কষ্ট ভোগ করেছি।"