ভোলার গ্যাস নিয়ে বিভ্রান্তি, প্রকৃত মজুত ২ টিসিএফ!

পূর্বে ৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুতের সম্ভাব্যতার কথা জানানো হলেও ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুত ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

ফাইল ছবি

বৃহস্পতিবার জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভোলা গ্যাসক্ষেত্রের মজুত নিয়ে সভা শেষে আমরা এ তথ্য পেয়েছি। ৫ টিসিএফ মজুতের যে তথ্য আগে দেওয়া হয়েছিল তা ভুল। সঠিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ভোলার প্রমাণিত গ্যাস মজুত ২ টিসিএফ।’

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) এবং রাশিয়ার জ্বালানি জায়ান্ট গ্যাজপ্রমের যৌথ প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে ভোলায় ৫ টিসিএফেরও বেশি গ্যাস মজুতের খবর প্রকাশিত হয়েছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস কোম্পানি পেট্রোবাংলাও এ খবরকে সমর্থন করেছিল।

তবে জ্বালানি উপদেষ্টা এসব দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘ভোলায় যদি এত বিশাল মজুত থাকতো, তাহলে দেশে এত গ্যাস আমদানি করার প্রয়োজন হতো না।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের আরও অনুসন্ধান চালাতে হবে। ভোলার বিভিন্ন স্থানে সিসমিক জরিপ ও খনন কার্যক্রম চালিয়ে প্রকৃত মজুত নির্ণয় করা হবে। এ জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকারি অনুমোদনের জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ড. এম তামিম, ড. বদরুল ইমাম এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্রনাথ সরকারসহ জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা আগের মজুতের হিসাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সোয়েব বলেন, ‘ভোলার শাহবাজপুর, ভোলা এবং ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে ২.০৪৭ টিসিএফ গ্যাসের মজুত প্রমাণিত হয়েছে, যার মধ্যে ১.৪৩২ টিসিএফ উত্তোলনযোগ্য। তবে ভোলার চর ফ্যাশন এলাকার জন্য কোনো সিসমিক তথ্য নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাপেক্স ও গ্যাজপ্রমের সিসমিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, চর ফ্যাশন এলাকায় ২.৬৮৬ টিসিএফ গ্যাস মজুতের ১০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে, শাহবাজপুর, ভোলা এবং ইলিশা ক্ষেত্রেও ২.৪২৩ টিসিএফ গ্যাস মজুতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে খননের মাধ্যমে এসব তথ্য যাচাই করা জরুরি। খননের মাধ্যমে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ৫.১০৯ টিসিএফ গ্যাস মজুতের দাবি সঠিক নয়।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম তামিম বলেন, ‘সম্ভাব্য মজুত নির্ধারণের জন্য প্রথমে সিসমিক জরিপ পরিচালনা করা হয়। তবে প্রমাণিত মজুত ঘোষণার জন্য প্রকৃত খনন প্রয়োজন। খনন করে গ্যাসের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়ার পরই তা প্রমাণিত মজুত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।’

ড. বদরুল ইমামও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘৫ টিসিএফ গ্যাস মজুতের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুল। এটিকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে প্রমাণিত মজুত হিসেবে নয়।’

জ্বালানি সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা খান বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আগামী শীতে গ্যাস বা বিদ্যুতের তীব্র সংকট থাকবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘চলমান ডলার সংকট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ১ বিলিয়ন ডলার করে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ডলার সংকটের কারণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বেসরকারি বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহকারীদের বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য দাতা সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। এ আর্থিক সহায়তা ভবিষ্যতে জ্বালানি সংকট কমাতে সহায়তা করবে।’