উন্নয়ন প্রকল্পে অপচয় রোধে কঠোর অবস্থানে সরকার
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিকল্পনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হলো উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের অপচয় এবং অপব্যবহার বন্ধ করা এবং দুর্নীতি দমন করা। পাশাপাশি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন বাজেটের আকার বাড়ানোর চেয়ে উন্নয়নমূলক কাজের মান নিশ্চিত করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো তহবিলের অপচয় এবং অপব্যবহার বন্ধ করা এবং দুর্নীতি দমন করা। এই লক্ষ্য অর্জনে যদি ব্যয় কম থাকে এবং বাজেটের আকার কমানো হয়, তবে আমার কাছে এটি কোনো অসুবিধার বিষয় নয়।’
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর)) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এর আগে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভার পর তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হবে এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহও গতি পাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজেট ঘাটতি কোথায় সীমাবদ্ধ রাখা হবে তা নিয়ে প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ পরিচালনা করা জরুরি। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
বর্তমান এডিপি আকার কতটুকু ছাঁটাই করা হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এই মুহূর্তে এটি বলা সম্ভব নয়। কারণ বাজেট ব্যয় পূরণের জন্য তহবিলের সম্ভাব্য উৎস সম্পর্কে সরকার এখনও স্পষ্ট নয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, কিছুদিন আগেও তারা জানতেন না যে বিশ্বব্যাংক নতুন করে ১ বিলিয়ন ডলার তহবিল দেবে, যদি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ‘ফ্রিজারে’ থাকা প্রকল্পগুলো আর প্রক্রিয়াকরণ না করা হয়। বিশ্বব্যাংক এই অর্থ বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব করেছে।
ড. মাহমুদ বলেন, ইউএসএইডসহ সকল উন্নয়ন অংশীদার সরকারের নতুন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে তহবিল সরবরাহে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এমনকি তারা বলছে যে চলমান প্রকল্পগুলোতে তহবিল অব্যাহত রাখতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার তহবিলের সম্ভাব্য উৎস বিশ্লেষণ করে সতর্কতার সঙ্গে এবং ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে। প্রায় পাঁচ মাস পরে সংশোধিত এডিপির আকার সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, তারা প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া প্রায় সংশোধন করেছেন। কারণ মূল দুর্বলতাগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। যেহেতু বছরের পর বছর ধরে অধিকাংশ প্রকল্প পরিচালক রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন।
এমনকি ঠিকাদাররাও তাদের ইচ্ছামতো কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করত, যার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি পেত এবং তহবিলের অপব্যবহার ও অপচয় হতো।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের যাচাই-বাছাই এবং প্রণয়ন প্রক্রিয়া প্রায় একই থাকবে, তবে আমরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব এবং দ্রুততার সঙ্গে একনেকের অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করব। পাশাপাশি, প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর জন্য কিছু শর্ত আরোপ করব। কারণ বাস্তবায়নই মূল বিষয়।’
উপদেষ্টা অভিযোগ করেন যে, অতীতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ ছিল। একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের পর বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর কোনো জবাবদিহিতা ছিল না।
বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সরকার আগ্রহী উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বিপুল পরিমাণ বিদেশি সাহায্য এখনও আটকে আছে। কারণ এসব ক্ষেত্রে অনিয়মের সুযোগ কম, শর্ত থাকে এবং তদারকিও কঠোর হয়।
তিনি বলেন, অনেক বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্প বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পনা কমিশনের ‘ফ্রিজারে’ পড়ে আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক সরকারকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে, যদি এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে আরও সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, নতুন প্রকল্পগুলো অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়া করতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। কারণ পূর্ববর্তী সরকারের খসড়া প্রকল্পগুলোর অনেকগুলোই ছিল রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা সেগুলো যাচাই-বাছাই করছেন।
তিনি বলেন, আজকের একনেক সভায় বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলো অনুমোদনের পর সেগুলো আরও যাচাই-বাছাই করতে পারবে। যাতে প্রকল্পগুলোকে সময়োপযোগী এবং যুগান্তকারী করে তোলা যায়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো বিদেশি সাহায্য সর্বাধিক ব্যবহার করা এবং উন্নয়ন অংশীদারদের সহায়তায় নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা।’
তিনি আরও বলেন যে কিছু স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি সরকার এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে যাতে প্রকল্পের মান বজায় থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের তহবিল অপব্যবহার করবে না। দেশের জনগণ এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারে।
তিনি জানান, প্রকল্পের যাচাই-বাছাই, প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন বিষয়ে খুব শীঘ্রই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘অতীতের সরকারের আমলে অনেক বড় বড় মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে বিভিন্ন উপাদানের খরচ ছিল আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ বেশি। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আমাদের সরকার সতর্ক থাকবে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদিও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ করা সকল প্রকল্প খারাপ ছিল না, তবে অতীতে কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।
গাজীপুরে বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প গ্রহণের জন্য পূর্ববর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রকল্পটি যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে প্রকল্পটি ধ্বংস করতে হতে পারে।
তিনি জানান, প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আরও সতর্ক থাকবে। কারণ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তহবিলের অপচয়, অনিয়ম এবং গাছপালা ধ্বংসের ঘটনা জড়িত।
উপদেষ্টা বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকার দীর্ঘদিন ধরে পণ্যের শুল্কমুক্ত এবং কোটা-মুক্ত সুবিধা গ্রহণের জন্য আওয়াজ তুলে আসছিল। কিন্তু সত্য হলো, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার জন্য আরও বেশি প্রয়োজন হবে। এজন্য, অর্থনীতির দক্ষতা ও প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে শিক্ষা এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আরও নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.