আপনি পড়ছেন

ভারত শাসিত কাশ্মিরে বুধবার স্থানীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালে এই অঞ্চলের বিশেষ আধা-স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর এটিই প্রথম নির্বাচন। ভারতের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছিল পাকিস্তান। কাশ্মির ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। খবর এএফপি।

assembly elections in pulwama south of srinagarছবিতে দেখা যাচ্ছে, পুলওয়ামার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত রয়েছেন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ছবি - এএফপি

৮৭ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের এই মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে এখনও অনেকেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। ২০১৯ সালে কেন্দ্র কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। তারপর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত একজন রাজ্যপাল এই অঞ্চল পরিচালনা করছেন।

দশ বছর পর আয়োজিত এই আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচনকে অনেকেই বাস্তব রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ হিসেবে দেখছেন।

তিন দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা এবং পরিবহন জটিলতার কারণে ভৌগলিকভাবে ভাগে ভাগে ভোট নেওয়া হচ্ছে।

‘দশ বছর পর আমাদের কথা শোনার সুযোগ এলো,’ বলেন ৩১ বছর বয়সী নভিদ পারা। শ্রীনগরের কাছে পুলওয়ামার ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন তিনি।

‘আমি চাই আমাদের কথা যেন প্রতিনিধিরা তুলে ধরেন,’ তিনি আরও বলেন।

কাশ্মিরে প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে। ৩৫ বছর ধরে চলা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কারণে এই অঞ্চলে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, সেনা এবং বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন। শুধু এ বছরই ডজন খানেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সমাধান চান মানুষ

‘আমাদের সমস্যার পাহাড় জমে গেছে,’ বলেন শ্রীনগরের ৬৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মুখতার আহমেদ তান্ত্রে।

‘ক্ষমতার সব চলে গেছে আমলাদের হাতে।’

অতীতের তুলনায় এবার ভোটার উপস্থিতি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, বিগত নির্বাচনগুলিতে ভারতীয় শাসনের বিরোধিতাকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কাশ্মিরের স্বাধীনতা বা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূতকরণের দাবিতে নির্বাচন বয়কট করেছিল।

‘রাজনীতির সবকিছুই এখন এই বিরোধকে কেন্দ্র করে,’ বলেন জম্মু জেলার ৭৩ বছর বয়সী ব্যবসায়ী নবীন কোতওয়াল।

‘আমাদের একটাই চাওয়া, যারা আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন, শিক্ষিত এমন জনপ্রতিনিধি যেন আমাদের শাসন করেন।’

নির্বাচনে জোর প্রচারণা চললেও, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নয়াদিল্লির হাতেই থাকবে। কাশ্মিরের রাজ্যপাল নিয়োগ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা এর মধ্যে রয়েছে।

৯০ আসনের পরিষদ যে কোন আইন পাস করলেও বাতিল করার ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।

‘মানুষ তাদের স্থানীয় প্রতিনিধির কাছে গিয়ে আবেদন করতে পারবে,’ বলেন তান্ত্রে। ‘তারা যদি কিছু নাও করতে পারে, অন্তত সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারবে।’

ভোটগ্রহণের শেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২ অক্টোবর। ফলাফল প্রকাশের কথা আরো ছয় দিন পর।

কিছু না থাকার চেয়ে কিছু থাকা ভালো

জম্মু ও কাশ্মির - এই রাজ্যটি বিভক্ত। একটি অংশ হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মির উপত্যকা। আরেকটি হলো হিন্দু অধ্যুষিত জম্মু। দক্ষিণের পাহাড় এই দুই অঞ্চলকে বিভক্ত করেছে।

তৃতীয় অংশটি হলো পাহাড়বেষ্টিত লাদাখ। এখানে বেশিরভাগ মানুষ তিব্বতীয় বংশোদ্ভূত। চীনের সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলটিকে ২০১৯ সালে আলাদা কেন্দ্রশাসিত প্রদেশে পরিণত করা হয়।

এ বছর জম্মুতে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার এই অঞ্চলে এসে ভোটের প্রচারণায় মোদি বলেন, ‘সন্ত্রাস এর শেষ পর্যায়ে’। তিনি কাশ্মিরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ইঙ্গিত করে এই কথা বলেন।

ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দাবি করে, কাশ্মিরের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলে নতুন শান্তির যুগ এবং দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুরু হয়েছে।

২০১৯ সালে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ব্যাপক গ্রেপ্তার এবং মাসব্যাপী ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়।

২০১৪ সালের পর এটিই প্রথম স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন। তবে গত জুন মাসে ভারতে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন কাশ্মিরিরা। ওই নির্বাচনে মোদি টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসেন।

জম্মু জেলার একজন কৃষক সৈয়দ আলী চৌধুরী বলেন, ‘বহু বছর পর একটি নির্বাচিত স্থানীয় সরকার পাওয়া আমাদের জন্য একটি বড় স্বস্তি’। তবে তিনি স্বীকার করেন যে পূর্বের তুলনায় এই পরিষদের ক্ষমতা ‘অনেক কম’।

‘কিছু না থাকার চেয়ে কিছু থাকা ভালো,’ তিনি বলেন।

‘আগে যখন স্থানীয় সরকার ছিল, তখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে সচিবালয়ে যেতে দেখা যেত। এখন কারো যাওয়া দেখা যায় না, কারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।’

অর্থনৈতিক সঙ্কট

২০১৯ সালের পর নাগরিক অধিকারের ওপর যে সব কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে, তা নিয়ে অনেক কাশ্মিরি ক্ষুব্ধ। বিজেপি শুধুমাত্র হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলে কিছু আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

সমালোচকরা অভিযোগ করছেন, বিজেপি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহিত করে ভোট বিভাজনের চেষ্টা করছে।

বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। জুলাই মাসের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলে বেকারত্বের হার ১৮.৩ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

কাশ্মিরের মর্যাদা পরিবর্তনের ফলে ছোট পরিসরে কারখানা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকার নির্মাণ এবং খনিজ উত্তোলন, কাশ্মিরের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলিকে দিয়ে দিচ্ছে।

‘আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা হলো বেকারত্ব,’ বলেন ২৭ বছর বয়সী একজন বেকার স্নাতক। ‘জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.