আকস্মিক বন্যায় ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি

গত আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আঘাত হানা ভয়াবহ বন্যায় বাংলাদেশের ১১টি জেলায় ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ছবি - সংগৃহীত

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ আগস্ট শুরু হওয়া এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও ৬৮ জন। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই বন্যার পানিতে কিছু নদীর পানি রেকর্ড স্তরে উঠেছিল।

এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ২৮ হাজার ৩৮৬টি ঘরবাড়ি। এর ফলে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ২১৯টি ঘরবাড়ি।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের জলাবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে পানি ছাড়ার কারণে বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। মুষলধারে বৃষ্টিতে ৪২৩টি কালভার্ট সম্পূর্ণরূপে ভেসে গেছে এবং ১ হাজার ৯৭টি কালভার্ট আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বন্যায় ৩ হাজার ৬৮৪ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ১৩ হাজার ৭৮২ কিলোমিটার সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটারই গ্রামীণ সড়ক, যা গ্রামাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি করেছে।

শিক্ষা ব্যবস্থায়ও এই বন্যার প্রভাব পড়েছে। ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরও ৩ হাজার ৩৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও রক্ষা পায়নি। ৮৪টি মসজিদসহ ৯০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানিতে ভেসে গেছে এবং ৩ হাজার ২৬৩টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও কুমিল্লার বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৬১ কিলোমিটারের বেশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ২৮৬ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বন্যার পানিতে দীর্ঘদিন ডুবে থাকায় কুমিল্লা জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ভারতের ডুম্বুর জলাবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে পানি ছাড়ার ফলে গুমতী নদীর পানি বেড়ে এই অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর দুই সপ্তাহের মধ্যেই উপকূলীয় অঞ্চলে আবারও ভারী বর্ষণ শুরু হয়। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে কক্সবাজারে ৭০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য খোলা তহবিলে এ পর্যন্ত ৭৯.৫২ কোটি টাকা জমা পড়েছে। নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসা এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ৫ কোটি টাকার খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।