৬ মাসে ৯০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক!

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আগামী ছয় মাসে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে পারে বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ডিসেম্বরে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা এবং মার্চে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের সংস্কারের জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করবে এডিবি।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের লোগো

রবিবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে এডিবির দক্ষিণ এশিয়ার মহাপরিচালক তাকো কোনিশির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আবেদনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চূড়ান্ত করার জন্য ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হতে পারে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে আর্থিক খাতের সংস্কার এবং পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এডিবিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে অভিহিত করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ব্যাংকটি বাংলাদেশের সঙ্গে তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বৈঠকে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

ডিসেম্বরে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪০০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন।

এডিবি ছাড়াও, অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৩ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাংকের কাছে ১ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ঋণ চেয়েছে।

এর আগে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এডিবির দক্ষিণ এশিয়ার মহাপরিচালক তাকো কোনিশি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে এডিবি এবং দেশে গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত সংস্কার শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করতে আগ্রহী।

কোনিশি বলেন, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বাংলাদেশকে নীতি-ভিত্তিক ঋণ প্রদানের সুযোগ রয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্নির্মাণের একটি নতুন সুযোগ দিয়েছে।

‘আমরা একেবারে শূন্য অবস্থায় আছি। যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু করতে হবে,’ প্রধান উপদেষ্টা এডিবির প্রতিনিধি দলকে বলেন।

সাক্ষাতকালে, সরকারের নব-ঘোষিত আর্থিক খাতের সংস্কার এবং কর তথ্য ডিজিটালাইজেশন, তথ্য স্বচ্ছতা, জ্বালানি, বেসরকারি খাত এবং বিনিয়োগ সহ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী মন্তব্য করেন যে, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে গতিশীলতা এবং রিজার্ভ এবং রেমিটেন্সের সঙ্গে এর আন্তঃসম্পর্ক ইতিমধ্যেই উন্নতির লক্ষণ দেখাচ্ছে।

‘এই ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস এবং বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় উত্থান রয়েছে,’ সিদ্দিকী বলেন।

সিনিয়র সচিব এবং এসডিজি বিষয়ক প্রধান লমিয়া মোরশেদ, এডিবির সিনিয়র উপদেষ্টা এডিমন গিন্টিং, দেশীয় পরিচালক মনোনীত হো ইউন জেওং এবং উপ-দেশীয় পরিচালক জিয়াংবো নিং সভায় উপস্থিত ছিলেন।