ভয়াবহ বন্যায় মধ্য ইউরোপ বিপর্যস্ত, মৃত্যু ১৭

ভূমধ্যসাগরের নিম্নচাপ, একটানা বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে মধ্য ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিনে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমপক্ষে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

পোল্যান্ডের বন্যাকবলিত একটি এলাকা

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া - এই সাতটি দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে হাঙ্গেরিতে সাতজন, পোল্যান্ডে চারজন, চেক প্রজাতন্ত্রে তিনজন এবং অস্ট্রিয়ায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

গত প্রায় ছয় দিন ধরে পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া এবং অস্ট্রিয়ায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে নদ-নদী, খাল-বিল পানিতে উপচে পড়ে অনেক লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। পানির তীব্র স্রোতে অনেক সেতু ভাঙছে। ফলে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

চেক রিপাবলিকের বন্যাকবলিত একটি এলাকা

পোল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নাইসা পুরোপুরি জলমগ্ন। সেখান থেকে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম পোল্যান্ডে বন্যার পানির তোড়ে একটি বাঁধ ভাঙার কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এছাড়া রাজধানী ওয়ারশ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রোমানিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় অধিকাংশ গ্রাম ও শহরেই বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক এলাকায় বন্যার পানি এত দ্রুত প্রবেশ করেছে যে, লোকজন বাড়ি ছাড়ার সময় কোনো কিছুই সঙ্গে নিতে পারেনি।

চেক প্রজাতন্ত্রের অনেক শহর-গ্রাম পানিতে ডুবে আছে। বেশ কিছু শহরের রাস্তাঘাট এখন ছয় ফুট পানির নিচে। এরই মধ্যে সেখানে খাদ্য ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে ভাঙছে গত কয়েক দিন ধরে।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এখন পর্যন্ত বন্যার পানি না ঢুকলেও রাজধানীর আশপাশের এলাকা ইতিমধ্যেই জলমগ্ন। উদ্ধারকারীরা বন্যাকবলিত এলাকা থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। এছাড়া উদ্ধার কাজ চালাতে গিয়ে একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

ভূমধ্যসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ নদী দানিউবের পানি বেড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ হারে। এতে স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লাভা এবং হাঙ্গেরি রাজধানী বুদাপেস্ট যে কোনো মুহূর্তে বন্যার পানিতে প্লাবিত হতে পারে।

জার্মানির বাভারিয়া, স্যাক্সনি ও ব্র্যান্ডেনবার্গ রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে ক্রমাগত। সেখানকার এলবে নদীর উপর ক্যারোলা সেতু আংশিকভাবে ধসে পড়েছে।

হাঙ্গেরি জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ১২ হাজার সেনা কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যকে তৈরী রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।