ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের ‘অর্থবহ অংশীদারিত্ব’: আর্থিক খাত সংস্কারে সহায়তার আশ্বাস

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনায় বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে বলে জানালেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন। এই আলোচনাকে অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্বের ভিত্তি হিসেবে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।

মো. জসিম উদ্দিন

রোববার (১৩ই আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় একাধিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থবহ অংশীদারিত্বের ভিত্তি। আমরা ভবিষ্যতে বিভিন্ন পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাব। এটি এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি ভালো ভিত্তি।’

পররাষ্ট্র সচিব জানান, আলোচনায় আর্থিক খাতের সংস্কার বিষয়টি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে, বিশেষ করে অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারে, সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

তিনি বলেন, ‘আলোচনা শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত রূপ পেতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

জসিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক খাতের সংস্কারে বাংলাদেশ কর্তৃক চিহ্নিত কিছু ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও জানান, শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশ যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছে।

প্রতিনিধি দলটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন পদ্মায় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন।

ভারত সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আলাদা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সুতরাং, এ ধরনের কোনো বিষয় এখানে আলোচিত হয়নি।’

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাক্ষাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন না।

তবে সেখানে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তাদের সময়সূচী মিললে তারা একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেতে পারেন, তিনি আরও বলেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ব্রেন্ট নিম্যান, দক্ষিণ ও মধ্য এশীয় বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফি সিদ্দিকী এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন।

তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্র বলে, ‘পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভালো লেগেছে... । আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সুযোগ প্রসারিত করতে, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এবং জলবায়ু ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে। বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য গতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির পথে তারা সমর্থন প্রদান করে।

অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলে, ‘শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আমাদের অংশগ্রহণ কেন্দ্রীভূত ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টার ওপর, যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ।’

গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটিই প্রথম মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর।

পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এই মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রতিনিধি দলের আগমন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতি তাদের গুরুত্বারোপের প্রতিফলন।’

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আলোচনা করেন কিভাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন চাহিদাগুলো পূরণে সহায়তা করতে পারে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই দেশ শ্রম সংস্কার, বাণিজ্য সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সংকট এবং জিএসপি সুবিধা বিষয়েও আলোচনা করেছে।