নিম্নচাপের তাণ্ডব: কক্সবাজারে ৬ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ অসংখ্য জেলে
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
গত কয়েকদিন ধরে চলা টানা বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে কক্সবাজার। এতে নতুন করে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। কমপক্ষে ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং বহু জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
ছবি - সংগৃহীত
শনিবার দুপুরের দিকে কিছুটা কমলেও কক্সবাজারে টানা দু’দিনেরও বেশি সময় ধরে মুষলধারে বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। এই সময়ে ৭০ জন জেলেসহ কমপক্ষে আটটি ট্রলার নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার ছয় জেলের মরদেহ সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসে। তাদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন: মো, জামাল (৩৭), নুরুল আমিন (৪০), আব্দুল করিম (৩৫) এবং আব্দুন নূর (৩৮)। অন্য দুজনের পরিচয় এখনও অজ্ঞাত।
এই ছয় জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আবহাওয়া জনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ জনে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ভূমিধসের কারণে ছয় জনের মৃত্যু হয়।
১৯৮১ সালের পর কক্সবাজারে গত ১২ এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ৪৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত গত ৫৪ ঘন্টায় জেলাটিতে ৬৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যার মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
শুধু দুই দিনেরও কম সময়ে কক্সবাজারে সেপ্টেম্বর মাসের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের (৩৪০.৯ মিলিমিটার) দ্বিগুণ বৃষ্টি হয়েছে।
এই ভয়াবহ বন্যায় কক্সবাজারের নগর ও গ্রামাঞ্চলের প্রায় সমগ্র এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে শনিবার কক্সবাজার শহরের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল জানান, শনিবার সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফাঁদারদাঁড়ি, নুনিয়াছড়াসহ জেলা শহরের নিম্ন অঞ্চলে প্রায় দশ হাজার মানুষ এখনও অবরুদ্ধ রয়েছেন।
হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, উখিয়ায় ৪০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এখনও ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
শনিবার উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হোসেন জানান, তিনি আক্রান্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন।
নোয়াখালী থেকে প্রতিনিধি জানান, হাতিয়ায় মেঘনা নদীতে ১০টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। এতে ১৮ জন জেলেকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও শনিবার বিকেল পর্যন্ত ৮ জন নিখোঁজ ছিলেন।
চারটি সামুদ্রিক বন্দরের জন্য ৩ নম্বর বিপদ সংকেত জারি থাকা সত্ত্বেও জেলেরা তাদের ছোট ছোট ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে যান। পরবর্তীতে তীব্র ঝড়ের মুখে তারা কিনারায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। কিনারায় ফিরে আসার সময় ট্রলারগুলো ডুবে যায়।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো, মনিরুজ্জামান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ইউএনবি সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাতের কারণে চাঁদপুর শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে।
টানা বৃষ্টির কারণে জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক, বিশেষ করে কুমিল্লা সড়ক, ট্রাক সড়ক এবং পুরাতন বাজার-দোকান ঘর সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক শনিবার বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলে আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাত উল্লেখযোগ্য হারে কমতে পারে’।
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকাসহ মধ্য বাংলাদেশের কিছু অংশে ও পশ্চিমাঞ্চলে আগামীকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে’।
রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলে ভূমিধ্বসন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শনিবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় সর্বোচ্চ ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে ঢাকায় ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বরিশাল বিভাগের চারটি আবহাওয়া কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিতে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এই বৃষ্টিপাত রাজধানী ঢাকার জন্য সামান্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাজধানীতে ও তাপমাত্রা কমে এসেছে। এছাড়াও বৃষ্টিপাতের ফলে রাজধানীর বায়ু দূষণের পরিমাণ সামান্য কমে এসেছে।
শনিবার সারাদিন ঢাকায় হালকা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে বাতাস বয়ে গেছে। ছুটির দিন হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ ঘরে থাকায় রাস্তাঘাট ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় ফাঁকা।
তাপমাত্রা কমার ফলে বিদ্যুতের চাহিদা কমে এসেছে, যা নতুন সরকারের জন্য একটি সাময়িক স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
শনিবার বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে যে, হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানি বেড়ছে। কেন্দ্রটি আরো জানিয়েছে যে, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে যেতে পারে। এতে করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার নিম্নাঞ্চল ডুবে যেতে পারে।
এছাড়াও ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এতে করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না বলেই আশা করা যাচ্ছে।
শনিবার বিকেল ৬টায় আবহাওয়া বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত বিষণ্ণতাটি ঘনীভূত হয়ে একটি স্থলভাগে অবস্থিত ডিপ্রেশনে পরিণত হয়েছে এবং পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
নিউ এজ অবলম্বনে
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.